প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৩০ এএম
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ১১:২৬ এএম
চীনের মধ্যস্থতায় চুক্তিতে আসছে সৌদি আরব ও ইরান। ছবি : সংগৃহীত
সাংহাই কো-অপারেশন অরগানাইজেশনে (এসসিও) সৌদি আরবের যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের খবরটি এমন একটি সময়ে এলো যখন চীন-রাশিয়া প্রশ্নে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। মূলত ওই অঞ্চলের আঞ্চলিক ক্ষমতাকে চীন ও রাশিয়ার নিকটবর্তী করার লক্ষ্যেই সেগুলো চলছে।
জানা গেছে, গত বুধবার সৌদি আরবের মন্ত্রিসভায় এসসিওতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি সম্মতি পেয়েছে। এতে করে এসসিওর আনুষ্ঠানিক সংলাপ অংশীদারে পরিণত হবে রিয়াদ। মূলত এটি অর্থনীতি ও সুরক্ষাবিষয়ক একটি জোট। এর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কম্বোডিয়া, মিসর, নেপাল, কাতার, শ্রীলঙ্কা এবং তুরস্ক। জোটটির পর্যবেক্ষকদের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, বেলারুশ এবং মঙ্গোলিয়ার মতো দেশ। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর অবশ্য আফগানিস্তানের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে পর্যবেক্ষক থেকে এসওসির পূর্ণ সদস্য হয়েছে তেহরান। আর চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব-ইরান কূটনৈতিক চুক্তিতে আসার কয়েক সপ্তাহের মাথায় এলো রিয়াদের এ সিদ্ধান্ত। সৌদি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ আলি আল-শিহাবি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পরিপূরক হিসেবে কিছু কৌশলী অংশীদার গড়ে তোলার লক্ষ্যে দাপ্তরিক কৌশল অবলম্বন করছে সৌদি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীন এবং তাদের গড়ে তোলা অন্যান্য বহুপক্ষীয় সংস্থা এটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে চীনের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে, পাশাপাশি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোর কাছ থেকেও সুফল লাভ করছে তারা।’
আর ঠিক এ সময়টিতেই যুক্তরাষ্ট্রকে দেখা যাচ্ছে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে। শিহাবি বলেন, ‘সৌদির বৈচিত্র্য কৌশল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছে বা এ রকমটিই করবে অঞ্চলের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার লক্ষ্যে।’
তিনি আরও জানান, পারস্য উপসাগরীয় তেলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল চীন। ফলে এ অঞ্চলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ব্যাপারে তাদের স্বার্থও ব্যাপকভাবে জড়িত। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে সৌদি আরব। চীনকে আরও সক্রিয় ভূমিকায় নিয়ে আসতে কাজ করেছে। তারাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ প্রসঙ্গে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ক
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে। প্রথম যে বৈদেশিক নীতিবিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো বাইডেন নেন, তার মধ্যে একটি ছিল রিয়াদকে যুদ্ধ সহায়তা দেওয়া থামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। অথচ সৌদি সামরিক জোট ইয়েমেনে আনসার উল্লাহ বা হুতিদের বিরুদ্ধে লড়ছিল।
সহায়তা বন্ধের পরপরই আনসার উল্লাহ দলটিকে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বের করে আনেন তিনি। তবে বাইডেন প্রশাসনও বারবার নিন্দা জানিয়েছে গোষ্ঠীটির কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। মস্কোর ওপর পশ্চিমের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং সংঘাতের জেরে জ্বালানি মূল্য বেড়ে যায়। বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৌদিকে তেল উৎপাদন বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর নাগাদ রাশিয়া এবং তেল রপ্তানিকারক রাষ্ট্রসমূহের সংস্থা ওপেক প্লাসের সদস্যদের সঙ্গে যোগ দেয় সৌদি আরব। অন্যদিকে বাইডেন নিজ প্রশাসনকে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনার নির্দেশ দেন।
ইরানের আবির্ভাব
এসব ডামাডোলের মধ্যেই সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে এসসিওতে যোগ দেয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি উজবেকিস্তান সফর করেন এসসিওর বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে। এসসিও বাদেও ব্রিকসের ব্যাপারেও আগ্রহ দেখায় ইরান। ওই বহুপক্ষীয় জোটটিও চীন এবং রাশিয়া পরিচালনা করে। সেটিতে রয়েছে ব্রাজিল, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো।
সৌদি আরব যেভাবে এলো
সৌদি আরবের নিজেরও ওই দুই সংস্থার দিকে নজর ছিল। তারাও চাইছিল সেগুলোতে যোগ দিতে। প্রথম চীন-আরব সম্মেলনে যোগ দিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ডিসেম্বরে সৌদি রওনা হন। সেখানে বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং আরও কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পথ উন্মোচিত হয়।
পরে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি দেখা করেন শির সঙ্গে। বেইজিং থেকে ত্রিপক্ষীয় এক বিবৃতিও ঘোষিত হয়। জানানো হয়, চীনের মধ্যস্থতায় চুক্তিতে আসছে সৌদি আরব ও ইরান। সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সৌদি আরব আলোচনা শুরু করেছে, এমন খবরও আসতে শুরু করে।
কিংস্টোন ইউনিভার্সিটি পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের সৌদি পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ আজম আল-শেদাদির মতে, এ সম্পর্কগুলোর মানে এই নয় যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ ঘটছে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ এবং দুই দেশের জন্য কৌশলগত। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে দুই দেশের যা অবস্থান, তাতে এটি বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।’
সূত্র : নিউজউইক