ইউক্রেন যুদ্ধ
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ০৯:২৩ এএম
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ইস্কানদার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে মস্কো। ছবি : সংগৃহীত
রসদের খেলায় পরিণত হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। পশ্চিম এবং রাশিয়া- দুই পক্ষই প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র, যুদ্ধবিমান এবং লোকবল পাঠাচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে। দুই পাশ থেকেই রসদ খরচের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ লক্ষ করা গেছে।
এতসব ডামাডোলের মধ্যে শুধু একটি রসদ ব্যবহার করা বাকি। তা হলো পারমাণবিক অস্ত্র। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার হুমকি দেওয়া হলেও কোনো পক্ষই সেদিকে পা বাড়ায়নি।
তবে এসবের মধ্যেই একটি খবর সামনে এসেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ইস্কানদার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে মস্কো। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন রাশিয়া এ সিদ্ধান্ত নিল?
এর উত্তরটি একদিক থেকে দেখলে অনেকটাই সাদামাটা- এ সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছে ন্যাটোর ভীতি। যেভাবেই হোক যুদ্ধের পরিসর আর বৃদ্ধি পাক, তা চাইছে না রাশিয়া। আরও একটি কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে। তা হলো ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাঙ্ক পাঠানোর জবাব দেওয়া।
যেটাই হোক না কেন, পোল্যান্ড এরই মধ্যে নিজেদের সামরিক বাহিনীর আকার দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও ফ্রান্সে নিযুক্ত পোলিশ রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ যদি দেশটির সেনাবাহিনী সামাল না দিতে পারে তাহলে পোল্যান্ড এ যুদ্ধে শামিল হতে বাধ্য হবে।
ফলে ওই অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব ধরে রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। এমনিতে দেশটির প্রচুর কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে যা ভূমি, আকাশ এবং সাগর থেকে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। এতদিন তারা সেগুলো নিয়ে কোনো কথা বলেনি। তবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার প্রশ্নে শুরু থেকে এতদিন পর্য়ন্ত রুশদের যে অবস্থানটি ছিল, তা পাল্টে গেছে বেলারুশে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্তটির মধ্য দিয়ে।
এশিয়া টাইমসের বিশ্লেষণে স্টিফেন ব্রায়েন এবং সোশানা ব্রায়েন বলেছেন, রাশিয়ার নেতা এবং বক্তারা এখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে কথা বলছেন। হয়তো নিজ দেশের জনসাধারণকে প্রস্তুত রাখতে চাইছেন তারা। পুতিন নিজেও মস্কোর চারপাশে আকাশ প্রতিরক্ষা উল্লেখযোগ্য হারে জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বসন্তের শেষে বা গ্রীষ্মের শুরুর ভাগে বড় মাপে আক্রমণ চালানোর কথা ভাবছে ইউক্রেন। মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর পক্ষ থেকে সব ট্যাঙ্ক এসে পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করছে তারা। ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার হাত থেকে পুনরুদ্ধার ওই আক্রমণের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে এরই মধ্যে প্রস্তাব রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসির স্টিফেন ব্রায়ান বলেন, আদৌ ইউক্রেন ক্রিমিয়ায় আক্রমণ পরিচালনা করলে সেখানে কিছু ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতিও দেখা যেতে পারে। সব মিলিয়ে গোটা বিষয়টি রাশিয়ার জন্য বড় মাপের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ রকম পরিস্থিতিতে হয়তো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যাবে দেশটিকে।
ইউক্রেন যুদ্ধ পারমাণবিক যুদ্ধের যোগ্য নয়। তবে যদি রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং যুক্তরাষ্ট্র কী করতে পারে, ইউক্রেনীয় সেনারা কী করতে পারে, সে ভয়ে কোনো পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে, তবে তা হবে ইউরোপের জন্য মহাবিপর্যয়।
পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আগে যুদ্ধের সব পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হওয়া জরুরি এবং এ বিষয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেরই এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়াও চীনকে অবশ্যই এ সমঝোতায় রাখতে হবে।
সূত্র : এশিয়া টাইমস