প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৮:৩১ পিএম
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৯:১৫ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ছে ইউক্রেনের এক সেনা। গত ফেব্রুয়ারিতে তোলা। ছবি: সংগৃহীত
বলা হয়ে থাকে, যুদ্ধ ছাড়া বড় শক্তিগুলো টিকে থাকতে পারে না। তাই একটা সময় পর পর তাদের যুদ্ধে জড়াতে হয়। কারণ যুদ্ধ একপক্ষের জন্য সর্বনাশা হলেও অন্যপক্ষের জন্য পৌষমাস নিয়ে আসে। ইউক্রেন যুদ্ধে যাদের জন্য পৌষমাস বা লাভজনক হিসেবে দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অন্যতম। অস্ত্র বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অস্ত্র ভান্ডারে টান পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো অস্ত্র ও গোলাবারুদ এতটাই কমেছে যে, যার কোনো কোনোটির ঘাটতি পূরণ করতে ১৩ বছর পর্যন্ত লেগেছে যেতে পারে।
ইয়াহু নিউজ জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র এত বেশি স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেছে যে, যার ঘাটতি মেটাতে ওয়াশিংটনের ১৩ বছর লেগে যেতে পারে। আর জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার ঘাটতি পূরণ করতে লাগতে পারে প্রায় পাঁচ বছর। তবে উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা বাড়ানো হলো আরেকটু কম সময়ে তা পূরণ করা সম্ভব হতে পারে।
বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ অর্থ থেকে ইতোমধ্যে প্রায় এক হাজার ৯০০ কোটি ডলারের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এসব সামরিক সহায়তের মধ্যে একটি প্যাটরিয়ট এয়ার-ডিফেন্স সিস্টেমস, ২ লাখ রাউন্ডের বেশি কামান, রকেট, ট্যাংকের গোলা অন্যতম।
এখানে শব্দটা সহায়তা হলেও যে সামরিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তার একটা বড় অংশ পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফেরতে দিতে বাধ্য থাকবে ইউক্রেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জামের সিংহভাগ তৈরি করা হয় বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিতে। এসব কোম্পানির মালিকেরা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়।
ওয়াশিংটন পোস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মাসে ১৪ হাজার রাউন্ড ১৫৫এমএম গোলা-বারুদ তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। অথচ ইউক্রেনের সেনাদের সময় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ হাজার রাউন্ড গোলা-বারুদ শেষ করার রেকর্ড রয়েছে। এ অবস্থায় জানুয়ারিতে ১৫৫এমএম গোলা-বারুদের মাসিক উৎপাদন বাড়িয়ে ৯০ হাজার করার পরামর্শ দেন অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা। এটা কার্যকর করা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে গোলা-বারুদ ও অন্য সামরিক সরঞ্জামের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা ২০১৬ সালের পর আর কখনও দেখা যায়নি। তখন লিবিয়া ও ইরাকে বিপুল অস্ত্র ব্যবহার করে দেশটি বড় ধরনের সামরিক সরঞ্জামের ঘাটিতে পড়ে বলে উল্লেখ করা হয়েছে দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশের সামরিক সরঞ্জাম ঘাটতি দেশটির জন্য বিপদজনক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে শিক্ষা দিতে চলতি বছরজুড়ে অস্ত্র সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে বলে মনে করেন তরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মিশেল কফমান ও রব লি গত ডিসেম্বরে ফরিন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক প্রবন্ধে লেখেন, যুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। এতে টান পড়লে যুদ্ধের গতি বদলে যেতে পারে। তাই যুক্তরাষ্ট্রকে চলতি বছরজুড়ে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের গতি ঠিক রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ডিসেম্বরে বাইডেন প্রশাসনের প্রস্তাবিত সামরিক বাজেট ছিল ৮৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার।
সূত্র: ইয়াহু নিউজ