প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৬:৩২ পিএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৭:০৪ পিএম
মিয়ানমারে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় অবস্থান নেয় সেনারা। ছবি : সংগৃহীত
মধ্য মিয়ানমারে গত সপ্তাহে তিন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীসহ অন্তত ২২ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দেশটির সামরিক শাসনের বিরোধীরা বলেছে, ওই ঘটনা সেনাবাহিনী পরিচালিত বেসামরিক গণহত্যা।
মিয়ানমারের জান্তার এক মুখপাত্র বলেছেন, তাদের সেনারা দক্ষিণ শান রাজ্যের পিনলাউং অঞ্চলে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে ছিল, কিন্তু কোনো বেসামরিক মানুষের ক্ষতি করেনি।
জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ) এবং অন্য একটি বিদ্রোহী দল নান নিন গ্রামে প্রবেশ করলে স্থানীয়দের নিরাপত্তা দিতে সরকারি বাহিনী সেদিকে অগ্রসর হয়। তখন সন্ত্রাসী দলগুলো হিংস্রভাবে গুলি চালায়। তাতে কিছু গ্রামবাসী নিহত ও আহত হয়।’
তার কাছ থেকে আরও কিছু তথ্য জানতে চেয়ে রয়টার্স একাধিকবার কল করলেও সেই কলে সাড়া দেননি জাও মিন তুন।
কেএনডিএফের এক মুখপাত্র বলেছেন, তার সেনারা গত রবিবার নান নিনে প্রবেশ করে এবং একটি বৌদ্ধবিহারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ দেখতে পায়।
কেএনডিএফ এবং অন্য একটি গ্রুপ কারেনি রেভল্যুশন ইউনিয়নের (কেআরইউ) দেওয়া ভিডিও ও স্থিরচিত্রে ধড়, মাথায় বুলেটের ক্ষত এবং মঠের দেয়ালে বুলেটের ছিদ্র দেখা গেছে।
চিকিৎসক ইয়ে জাওয়ের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২২ জনকে হত্যা করার জন্য খুব কাছ থেকেই গুলি করা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে তিনজন জাফরান পরিহিত সন্ন্যাসীও ছিলেন।
ইয়ে জাও বলেন, ‘যেহেতু বাকি মৃতদেহগুলোতে কোনো সামরিক ইউনিফর্ম, সরঞ্জাম এবং গোলাবারুদ পাওয়া যায়নি, তাই এটি স্পষ্ট যে তারা বেসামরিক ছিল। যেহেতু নান নিন মঠের কম্পাউন্ডের মধ্যে সমস্ত মৃতদেহ পাওয়া গেছে, এটা স্পষ্ট যে এটি একটি গণহত্যা ছিল।’
কথিত গণহত্যার স্থান নান নিনে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে লড়াই চলছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি সংকটে পড়েছে। নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বের প্রশাসনকে সরিয়ে দিয়ে গণতন্ত্রের দিকে এক দশকের অস্থায়ী পদক্ষেপের অবসান ঘটিয়েছে।
জাতীয় ঐক্য সরকারের মানবাধিকার-বিষয়কমন্ত্রী অং মিও মিন বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে অন্তত চারটি ঘটনায় জান্তা যুদ্ধ অভিযান বাড়িয়েছে এবং নিরস্ত্র বেসামরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
তিনি একটি অনলাইন মিডিয়া সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে, জান্তার কৌশল হলো বেসামরিক মানুষকে টার্গেট করা, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।’
জান্তা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করে বলেছে, তার সেনারা শুধু ‘সন্ত্রাসীদের’ আক্রমণের জবাব দেয়।
রাজনৈতিক বন্দিদের নিয়ে কাজ করা একটি অলাভজনক সহায়তা সংস্থার মতে, অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক দমনে মিয়ানমারে অন্তত ৩,১৩৭ জন নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে।
সূত্র : রয়টার্স