প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ২২:২৭ পিএম
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের পর দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয়ও বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম। ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা চীন রবিবার (৫ মার্চ) নিজেদের প্রতিরক্ষা বাজেট চলতি বছর ৭ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। একই সময়ের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ।
রাজধানী বেইজিংয়ে শনিবার (৪ মার্চ) থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) দ্বিতীয় দিন এসব ঘোষণা দেওয়া হয়। এনপিসি চীন সরকারের সর্বোচ্চ ফোরাম। পাঁচ বছর পর পর এটি অনুষ্ঠিত হয়। এটির দুটি সেশন সাধারণত আলাদাভাবে হয়।
একটিতে পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আরেকটিতে নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দেওয়া হয়। এসব অনুষ্ঠানে কমিউনিস্ট অব চীনের সারা দেশ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা গোপন ভোটে এসব মনোনয়ন দেন। সেশন দুটি এবার এক সঙ্গে হচ্ছে।
এনপিসির অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে সরকারের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। প্রতিবেদন প্রকাশের বক্তৃতায় লি কেকিয়াং বলেন, চীনকে পরাস্ত করার ও আটকানোর বিদেশি প্রচেষ্টা সম্প্রতি ভয়ানক বেড়েছে। এ অবস্থায় আমাদের সব সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষণ, প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। যুদ্ধ পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিতে হবে তাই মাথায় রেখে আমাদের যাবতীয় শক্তি ও মনোযোগ ব্যয় করতে হবে। সামরিক শাখার সব দিকে আমাদের সামর্থ্য বাড়াতে হবে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ভাষণে আগামী চার বছর নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যয় রেকর্ড দ্রুত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন চীনা প্রধানমন্ত্রী। তার ঘোষণা অনুসারে, চলতি বছর দেশটি প্রতিরক্ষা খাতে ২২ হাজার ৫০০ ডলার ব্যয় করবে। অর্থাৎ চলতি বছর দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৯ সালের পর দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় এতটা দ্রুত আর কখনও বাড়ানো হয়নি। গত বছর তা বাড়ানো হয়েছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা চীনের প্রকৃত প্রতিরক্ষা ব্যয় দেশটির ঘোষিত বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি। তবে বেইজিংয়ের ঘোষিত প্রতিরক্ষা বাজেট এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছর প্রতিরক্ষা বাজেট ঘোষণা করেছে ৮০ হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় চারগুণ কম।
অন্য বিষয়ের মধ্যে মূলত তাইওয়ানকে প্রয়োজনে জোরপূর্বক নিজের অংশ করা এবং এশিয়া-প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব খর্ব করতেই চীন প্রতিরক্ষা বাজেটে বিশেষ জোর দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
স্টকহোমভিত্তিক অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পলিসির পরিচালক নিকলাস সোয়ানস্ট্রম বলেন, তাইওয়ানকে যে কোনো উপায়ে দখলে নিতে চায় চীন। এ জন্য সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি নিচ্ছে বেইজিং। তারই অংশ হিসেবে প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো হয়েছে। এই অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-আধিপত্যকেও চ্যালেঞ্জ করা চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
তবে কিছুটা ভিন্ন মত দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের নানয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা সেনাবাহিনী বিশেষজ্ঞ জেমস চর। এএফপিকে জেমস চর বলেন, এশিয়ার দেশগুলো যার যার জায়গা থেকে নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবছে। সেই ভাবনা থেকেই তারা তাদের নিরাপত্তা বলয় শক্তিশালী করছে। সেই ধারাবাহিকতায় চীনও তার প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়েছে।
প্রবৃদ্ধি নিয়ে সতর্কতা : গত বছর চীনের অর্থনীতি বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। অথচ তখন দেশটির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এ অবস্থায় চলতি বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ। এ লক্ষ্য হিসেবি এবং বাস্তবানুগ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে করোনাসহ নানান কারণে অর্থনীতি শ্লথ হওয়া সত্ত্বেও চীন নিরাপত্তা নিয়ে বেশি সতর্ক বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের নীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলফ্রেড মুলুয়ান। মুলুয়ান বলেন, চীনের জাতীয় নেতারা পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে নিরাপত্তা নিয়ে বেশি সতর্ক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অর্থনীতির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
রেকর্ড গড়ছেন শি : শি জিনপিং তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ আগেই পরিষ্কার হয়েছে। গত অক্টোবরে শিকে তৃতীয় মেয়াদে পার্টির সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দেশটিতে যিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক হন সাধারণত তিনিই প্রেসিডেন্ট হন। এ জন্য কয়েক বছর আগেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করেন শি। চলমান এনপিসির অধিবেশনে শুক্রবার শিকে তৃতীয় মেয়াদে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হবে।
সূত্র : এএফপি