প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:১৫ এএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১০:৩৭ এএম
গত ২ মার্চ ইরানের একটি হাসপাতালে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছেন এক নারী শিক্ষার্থী। ছবি: রয়টার্স
ইরানে স্কুল ছাত্রীদের বিষপ্রয়োগের ঘটনায় বিক্ষোভে নেমেছেন উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। দেশটির সংবাদ সংস্থা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, স্থানীয় সময় শনিবার (৪ মার্চ) রাজধানী তেহরানসহ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করেন তারা।
তবে ইরানে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শতশত স্কুলছাত্রীদের বিষপ্রয়োগের ঘটনার মূল কারণ কী তা এখনো জানা যায়নি। এছাড়া এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। কর্মকর্তারা বলছেন তেহরানের শত্রুরাই এমন কাজ করে থাকতে পারে।
ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাহরাম আইনুল্লাহি জানিয়েছেন, স্কুল ছাত্রীরা মৃদু বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে কিছু রাজনীতিবিদ মনে করছেন, মেয়েদের শিক্ষার বিরোধিতাকারী কট্টরপন্থি ইসলামী দলগুলো এ কাজ করতে পারে।
দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুররেজা রহমানী ফজলী জানান, এ ঘটনার তদন্তকারীরা ‘সন্দেহজনক কিছু নমুনা’ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন। যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাকে দেওয়া এক বার্তায় তিনি আরও বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহজনক কিছু নমুনা পাওয়া গেছে। ছাত্রীদের অসুস্থতার কারণ শনাক্ত করতে তা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব এর ফল প্রকাশ করা হবে।’
শনিবার পর্যন্ত ইরানের ৩১টি প্রদেশের মধ্যে অন্তত ১০টি প্রদেশের ৩০টিরও বেশি স্কুলে ছাত্রীদের বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওগুলিতে দেখা যায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুলে জড়ো হয়েছেন। অন্যদিকে কিছু শিক্ষার্থীকে অ্যাম্বুলেন্স বা বাসে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও দেখা যায়।
রয়টার্সের যাচাইকৃত এক ভিডিওতে দেখা যায়, শনিবার তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনের বাইরে অভিভাবকদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। যা পরবর্তীতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হয়। এ সময় তাদের সরকার বিরোধী নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। তেহরানের অন্য দুটি এলাকায় এবং ইসফাহান ও রাশতসহ অন্যান্য শহরেও একইরকম বিক্ষোভ হতে দেখা যায়।
অনেক ইরানিই মনে করছেন, বিষপ্রয়োগের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো মেয়েদের স্কুল বন্ধ করার প্রচেষ্টা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি যে, ঘটনাগুলো পূর্বপরিকল্পিত কি না।
এদিকে গত শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে। একইসাথে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছরের কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে উত্তপ্ত ইরান। সেই উত্তেজনার রেশ এখনও কাটেনি। অভিযোগ, হিজাব না পরার অপরাধে নৈতিকতা পুলিশ মাহসাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর পুলিশী হেফাজতেই তার মৃত্যু হয়। নৈতিকতা পুলিশের নির্যাতনের কারণেই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর হাজারো ইরানি প্রতিবাদে পথে নামেন।
অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে স্কুল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের কারণেই তাদের ওপর সরকারই প্রতিশোধ নিচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স