প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৮:৩৪ পিএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৮:৪৬ পিএম
তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ গত মাসে এক বিতর্কিত বক্তৃতা দেওয়ার পর সহিংসতার ভয়ে সে দেশ থেকে প্রায় ৩০০ পশ্চিম আফ্রিকান অভিবাসী গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রত্যাবাসন ফ্লাইটে তিউনিসিয়া ত্যাগ করেছে। কাইস সাইদ ২১ ফেব্রুয়ারির বক্তৃতায় দেশটির কর্মকর্তাদের অপরিকল্পিত অভিবাসন মোকাবিলা করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
ওই বক্তব্যে সাইদ প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, তিউনিসিয়ার জনসংখ্যার রূপরেখা পরিবর্তন করার জন্য অভিবাসীদের অস্তিত্ব একটি অপরাধমূলক চক্রান্ত। সাইদ তার বক্তৃতায় অভিযোগ করে বলেছেন, উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে বেশিরভাগ অপরাধের পেছনে ছিল এই অভিবাসীরা। সাইদের এই মন্তব্যে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ)।
জানা গেছে, ওই বক্তব্যের পরে ভীত হয়ে আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর শত শত নাগরিক নিজ নিজ দেশের দূতাবাসে প্রত্যাবাসন সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এ অবস্থার মধ্যে গত বুধবার গিনির ৫০ জনের একটি দলকে প্রথম দেশে পাঠানো হয়েছে।
কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংগঠকরা জানিয়েছেন, আইভরি কোস্ট এবং মালি গত শনিবার বিশেষ ফ্লাইটে তাদের ২৯৫ জন নাগরিককে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
তিউনিসিয়ায় আইভরিয়ান অভিবাসীদের সংগঠনের প্রধান জিন বাদেল গনাবলি বিমানবন্দর থেকে এএফপিকে বলেছেন, হোটেলে রাত কাটিয়ে আজ সকালে ১৪৫ জন নিজ দেশে চলে যাচ্ছে। তিনি আগেই বলেছিলেন, পুরো সম্প্রদায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তিউনিসিয়ায় নিযুক্ত আইভরি কোস্টের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম সাই সাভেন বলেছেন, মোট ১ হাজার ১০০ আইভরিয়ান তিউনিসিয়া থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় ১২ মিলিয়ন অধিবাসীর দেশ তিউনিসিয়ায় আফ্রিকার অন্যান্য অংশ থেকে প্রায় ২ হাজার ১০০ অনথিভুক্ত অভিবাসী রয়েছে। এদের মধ্যে আইভরিয়ান সম্প্রদায়ের অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার।
আইভরিয়ান স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান মাইকেল এলি বায়ো ভ্যামেট বলেছেন, তিউনিসিয়ায় থাকার অনুমতি থাকা সত্ত্বেও ৩০ জন শিক্ষার্থী প্রত্যাবাসন ফ্লাইটে নাম লিখিয়েছেন। তিনি ফোনে এএফপিকে বলেন, তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করেছেন, বাকিরা বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই হামলা, হুমকি এমনকি শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে।
মালি প্রায় ১৫০ জনকে প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বিমান ভাড়া করেছে। তিউনিসের একজন মালিয়ান কূটনীতিক এএফপিকে জানিয়েছেন, জান্তা নেতা কর্নেল আসিমি গোইটা দুর্দশাগ্রস্ত নাগরিকদের সহায়তা করার জন্য ‘খুব দৃঢ় নির্দেশনা’ দিয়েছেন।
সাইদ বিতর্কিত বক্তৃতা দেওয়ার পর থেকে অধিকার গোষ্ঠীগুলো সাব-সাহারান আফ্রিকানদের ছুরিকাঘাতসহ সহিংসতার ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত বুধবার (১ মার্চ) প্রত্যাবাসন করা প্রথম গোষ্ঠীর মধ্যে গিনিরা বলেছে, তারা তিউনিসিয়ায় আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
২৬ বছর বয়সি ব্রাহিমা ব্যারি এএফপিকে বলেছেন, আমি যদি আপনাকে বলি যে, তারা বর্বর, তবে সেটা কম হবে। তিউনিসিয়ায় অনেক আফ্রিকান অভিবাসী রাতারাতি তাদের চাকরি ও বাড়ি হারিয়েছেন।
সাইদের বক্তৃতার শেষে পরিচয় যাচাইয়ের পর ডজনখানেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এখনও আটক করা হচ্ছে। যারা দেশের দূতাবাস তিউনিসিয়ায় রয়েছে, তাদের অভিবাসীরা সেখানে ছুটে এসেছেন সাহায্যের জন্য। তিউনিসিয়ায় যেসব দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নেই, তারা বাঁচার আশায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তিউনিস অফিসের বাইরে অস্থায়ী শিবির স্থাপন করেছে।
সূত্র : এএফপি