প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫১ পিএম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৩ পিএম
ট্রেনের একটি কক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। ২০ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ডে। ছবি : সংগৃহীত
রাশিয়াকে কেউ হুমকি দিচ্ছে না। কিন্তু হুমকির অজুহাতে ইউক্রেন হামলার যে ন্যায্যতার ভাষ্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রচার করছেন, তা অযৌক্তিক।
রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান এক বছর পূর্ণ হওয়ার দুদিন আগে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) জাতির উদ্দেশে বাৎসরিক ভাষণ দেন পুতিন। এতে ইউক্রেনসহ যুগে যুগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পশ্চিমাদের প্রতারণার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন তিনি। ইউক্রেনে প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদেরই দায়ী করেন পুতিন।
পুতিনের ভাষণের কিছুক্ষণ পরই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান মঙ্গলবার পোল্যান্ডে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কই, রাশিয়ায় তো কেউ হামলা চালাতে যাচ্ছে না। রাশিয়া ইউক্রেন বা অন্য কোনো শক্তি থেকে হামলার হুমকিতে আছে, এমনটা প্রচার করাটাই অদ্ভুত, অযৌক্তিক।’
ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য যথারীতি পুতিনকেই দায়ী করে সুলিভান বলেন, ‘এ যুদ্ধে পুতিনকে কেউ বাধ্য করেনি। তিনিই এটা বেছে নিয়েছেন। তিনি না চাইলে এ যুদ্ধ হতো না। এখন তাকেই এ যুদ্ধ শেষ করতে হবে।’
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) থেকে পোল্যান্ডে তিন দিনের সফরে থাকা জো বাইডেন মঙ্গলবার ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর উপলক্ষে ভাষণ দেবেন। বাইডেনের ভাষণের আগে দেশটির রাজধানী ওয়ারসতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সুলিভান বলেন, ‘না, ভাষণে ইউক্রেন যুদ্ধ কূটনৈতিক সহায়তায় কীভাবে শেষ হতে পারে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা হাজির করবেন বাইডেন। তিনি বরং গণতন্ত্র এবং স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যে চলমান বৈশ্বিক সংগ্রামকেই জোরালোভাবে তুলে ধরবেন।’
পুতিনের অভিযোগ
ভাষণে পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনের সংঘাত ধুম করে আকাশ থেকে পড়েনি। এর একটা পটভূমি আছে। ২০১৪ সাল থেকে দনবাসের রুশ ভাষাভাষী সাধারণ মানুষকে যখন নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছিল, তখন থেকে পশ্চিমারা তা নিয়ে তামাশা শুরু করে। এখন তা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। কিন্তু আমরা ইউক্রেনে একটু একটু করে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাব।’
রুশ সংবাদ মাধ্যম আরটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দনবাসের গৃহযুদ্ধ বন্ধের জন্য ২০১৪-১৫ সালে দুটি চুক্তি হয়। বেলারুশের রাজধানীতে হওয়া ওই চুক্তিগুলো ‘মিনস্ক অ্যাগ্রিমেন্টস’ নামে পরিচিত।
পুতিনের অভিযোগ, ‘কথা ছিল ইউক্রেনের রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী দোনেৎস্ক ও গণপ্রজাতন্ত্রী লুহানস্কেকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে দনবাসে শান্তি ফিরবে, এমনটাই আশা করা হয়েছিল।’
‘কিন্তু এসব ছিল পশ্চিমাদের তামাশা, ধাপ্পাবাজি। অথচ দনবাসে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো কিছু করতে বাকি রাখেনি রাশিয়া। তাই ইউক্রেনে এখন যে প্রাণঘাতি সংঘাত চলছে, তার জন্য পশ্চিমই পুরোপুরি দায়ী।’
পুতিনের সিদ্ধান্ত, ‘পশ্চিমাদের এই প্রতারণা নতুন কিছু নয়। ঔপনিবেশিক মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠা পশ্চিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুগে যুগে এমন সব ঘৃণ্য প্রতারণা চালিয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। যুগোস্লাভিয়া, ইরাক, লিবিয়া এবং সিরিয়া তারই সাম্প্রতিক নজির।’
ইউক্রেন অভিযান এক বছর পূর্ণ হতে যাওয়ার মাত্রা দুদিন আগে পুতিন জাতির উদ্দেশে এই গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিলেন। এক বছর আগে আজকের এই দিনে ২১ ফেব্রুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে সার্বভৌম দেশের স্বীকৃত দেন পুতিন।
সূত্র : আরটি, এএফপি।