প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৫৮ পিএম
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩১ পিএম
সামুদ্রিক বরফ কিছু প্রজাতির জন্য বিশ্রামেরও স্থান। ছবি : বিবিসি
১৯৭০ সালের শেষদিকে স্যাটেলাইট ব্যবহার শুরুর পর থেকে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের চারপাশে এখন সামুদ্রিক বরফের পরিমাণ কম লক্ষ্য করা গেছে। দক্ষিণের গ্রীষ্ম চলাকালীন এতটা কম সামুদ্রিক বরফ অনাকাঙ্ক্ষিত বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার। তাদের ভাষ্য অনুসারে, এই বছরটি ব্যতিক্রম।
বাতাস, উষ্ণ বাতাস এবং পানির কারণে গলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে এখন সামুদ্রিক বরফের পরিমাণ মাত্র ১ দশমিক ৯১ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৯২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। এবারের গ্রীষ্মে এর পরিমাণ আরও হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত সাত বছরের মধ্যে ২০১৭, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে সামুদ্রিক বরফ গলার রেকর্ড হয়েছে।
গবেষণা, পরিবহন এবং মাছ ধরার জাহাজগুলো মহাদেশের চারপাশে যাতায়াত করার সময় এই রকমের চিত্রই তুলে এনেছে। সেখানে এখন বেশিরভাগ স্থানই কার্যত বরফমুক্ত।
এই নতুন রেকর্ড কতটা অস্বাভাবিক?
বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার সামুদ্রিক বরফের আচরণকে জটিল ঘটনা বলে মনে করেন, যার নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা যায় না।
গত ৪০ বছরের স্যাটেলাইট ডেটা জানাচ্ছে, সমুদ্রের বরফের পরিমাণ দ্রুত পরিবর্তনশীল। গ্রীষ্মে বরফের স্বল্প আকার ধারণের প্রবণতা শুধু গত কয়েক বছরে দৃশ্যমান।
কম্পিউটার মডেলগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্র বরফ দীর্ঘমেয়াদি পতন দেখাবে। যেমন আর্কটিকায় দেখা গেছে, যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে গ্রীষ্মকালীন বরফের পরিমাণ প্রতি দশকে ১২-১৩ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। কিন্তু অ্যান্টার্কটিকা এমন আচরণ করেনি।
অ্যান্টার্কটিকার সামুদ্রিক বরফ গত শতাব্দীর প্রথম দিকে হ্রাস পাচ্ছিল, কিন্তু তারপর বাড়তে শুরু করে। সম্প্রতি এটি দ্রুত পরিবর্তনশীলতা দেখিয়েছে। যা শীতকালীন রেকর্ডে সর্বোচ্চ এবং গ্রীষ্মে সর্বনিম্ন। শীতকালে ভাসমান তুষারস্তর ১৮ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এবং আরও কিছু বেশি এলাকা হতে পারে।
এক মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারে কতটুকু বরফ?
দীর্ঘমেয়াদী সময়ের গড় তুলনায় এই বছর গ্রীষ্মের আইস প্যাকটি বিস্তৃতভাবে অনুপস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্তই যথেষ্ট। এটি খুব শীঘ্রই আবার বাড়তে শুরু করবে। সমুদ্রের পৃষ্ঠে জমা লবণ পানিকে আরও ঘন করে তোলায় বরফখণ্ডগুলো ডুবে যায়।
এই বরফস্তর সমুদ্রের প্রবাহকে চালিত করে এবং জলবায়ু ব্যবস্থার শক্তি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। মেরুজীবনের জন্য সমুদ্রের বরফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টার্কটিকায় বরফের সাথে লেগে থাকা শেওলাগুলো ‘ক্রিল’ নামে পরিচিত। ছোট ক্রাস্টেসিয়ানদের জন্য এগুলো খাদ্যের উৎস-- যা তিমি, সিল, পেঙ্গুইন এবং অন্যান্য পাখির জন্য মৌলিক খাদ্যসম্পদ হিসেবে বিবেচিত। সামুদ্রিক বরফ কিছু প্রজাতির জন্য বিশ্রামেরও স্থান।
অ্যান্টার্কটিকার চারপাশে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তারতম্য বর্ণনাকারী এবং ঘুরে ঘুরে মহাদেশের বিখ্যাত পশ্চিমী বায়ুকে প্রভাবিত করা সাউদার্ন অ্যানুলার মোড (এসএএম), এই মুহূর্তে দৃঢ় ইতিবাচক পর্যায়ে আছে বলা যায়। এটি পশ্চিমাঞ্চলকে শক্তিশালী করে মেরুর দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং বর্ধিত ঝড়কে উত্তর দিকে ঠেলে দেয়।
গবেষকরা মনে করেন এসএএম সম্ভবত অ্যান্টার্কটিকার ওপরে একটি ওজোন গর্তের উপস্থিতি এবং বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের উত্থানের সঙ্গে যুক্ত।
সূত্র : বিবিসি