প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:১৬ পিএম
এই থেরাপির মাধ্যমে কেবল সুনির্দিষ্ট ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোতেই বিকিরণ প্রয়োগ করা হয়।
রেডিওলিগ্যান্ড থেরাপিকে রেডিওনিউক্লাইড বা রেডিওফার্মাসিউটিক্যাল থেরাপিও বলা হয়ে থাকে। এই থেরাপির মাধ্যমে কেবল সুনির্দিষ্ট ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোতেই বিকিরণ প্রয়োগ করা হয়।
ক্যানসারের চিকিত্সার অন্য যেসব ধরন বা পদ্ধতি রয়েছে, সেসব পদ্ধতিতে শরীরের যেকোনো দ্রুত বিভাজিত কোষকে লক্ষ্যবস্তু করে থাকে। এতে করে অনেক সুস্থ কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোগীদের ভয়ংকর সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভোগ করতে হয়।
তাই রেডিওলিগ্যান্ড থেরাপি নির্ভুল ও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রোগী এই থেরাপিতে অত্যন্ত সীমিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভোগ করেই সুস্থ হয়েছেন। তবে এই পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কারণ, এই ওষুধের মেয়াদ সীমিত।
এটি ক্যানসারের চিকিত্সার একটি কার্যকরী পদ্ধতি। এই রেডিওলিগ্যান্ড থেরাপির বিষয়ে বিশ্বের অনেক বিশেষজ্ঞ ও ক্যানসার রোগী অধীরভাবে অপেক্ষা করছেন। এই থেরাপির একটি সীমাবদ্ধতা হলো, ওষুধটি তৈরি হওয়ার পর সীমিত সময়ের মধ্যেই মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। দ্রুত উৎপাদন ও সরবরাহপদ্ধতির কারণে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই পদ্ধতি।
রেডিওলিগ্যান্ড একটি রেডিওআইসোটোপ দিয়ে তৈরি, যা বিকিরণ নির্গত করে। রেডিওলিগ্যান্ডকে সুনির্দিষ্টভাবে ক্যানসার আক্রান্ত কোষকে আক্রমণ করার জন্য তৈরি করা হয়। তবে এই তেজস্ক্রিয় উপাদানটির মেয়াদ খুব সংক্ষিপ্ত। একবার তেজস্ক্রিয়তা ক্ষয় হয়ে গেলে এটি আর কার্যকরভাবে ক্যানসারকোষকে মেরে ফেলতে পারে না। এই ওষুধ প্যাকেটজাত হওয়ার অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই রোগীদের কাছে পৌঁছাতে হয়।
বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভারটিস বর্তমানে লুটাথেরা ও প্লুভিক্টো নামে দুটি রেডিওলিগ্যান্ড থেরাপি তৈরি করে। লুটাথেরা ক্যানসারের একটি বিরল ধরন নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমার এবং প্লুভিক্টো একটি নির্দিষ্ট ধরনের প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। দুটোই গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন দ্বারা অনুমোদিত হয়। এই ওষুধের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে।
নোভারটিসের রেডিওলিগ্যান্ড থেরাপির প্রধান জীবন ভির্ক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ হাজার রোগী এই ওষুধ থেকে উপকৃত হতে পারে। তবে ওষুধটির দাম বেশি। প্লুভিক্টোর দাম ৪২ হাজার ৫০০ ডলার। আর লুটাথেরার দাম প্রায় ৫৩ হাজার ২০০ ডলার। এই ওষুধের দ্রুত উত্পাদন ও সরবরাহপদ্ধতির ব্যয় অত্যন্ত বেশি। নোভারটিস গত বছর ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এই ওষুধ বিক্রি করেছে। এই ওষুধ তৈরি ও সরবরাহে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, কেমোথেরাপির মতো পদ্ধতিগুলো ক্যানসারকোষের সঙ্গে শরীরের অনেক সুস্থ কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। পাশাপাশি এসব পদ্ধতির বিপুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। সেখানে সুনির্দিষ্ট ক্যানসারকোষকে আক্রমণ করা এই রেডিওলিগ্যান্ড থেরাপি অনেক কার্যকরী।
সিয়াটলের ফ্রেড হাচিনসন ক্যানসার সেন্টারের আণবিক ইমেজিং ও থেরাপির পরিচালক ড. ডেলফাইন চেন বলেন, ‘এই ওষুধকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা রয়েছে। এই ওষুধ প্রয়োগের পর অনেক রোগী আরও ভালো বোধ করেন। তাই একজন চিকিত্সক হিসেবে এটি আমার কাছে সত্যিই উত্তেজনাপূর্ণ এবং তৃপ্তিদায়ক কিছু অফার করতে সক্ষম হয়েছে।’
তুলান ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের সার্টর বলেন, ‘এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। আমি মনে করি রেডিওলিগ্যান্ড থেরাপি এমন একটি পদ্ধতি, যা রোগীদের জন্য অর্থবহ।’ ভবিষ্যতে আরও বেশি লোক এই চিকিৎসাপদ্ধতির সুবিধা নিতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সূত্র: সিএনবিসি