প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪৫ পিএম
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩৮ পিএম
উদ্ধার অভিযানে হোয়াইট হেলমেটসের সদস্যরা। ৭ ফেব্রুয়ারি সিরিয়ার ইদলিবে। ছবি : সংগৃহীত
ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় উদ্ধার তৎপরতা চলছে অত্যন্ত ধীরে। নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। ১২ বছরের গৃহযুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির বিদ্রোহী অধিকৃত ইদলিবে দ্বিতীয় মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, জাতিসংঘের ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল অঞ্চলটিতে খাবার দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
হোয়াইট হেলমেটস নামের সিরিয়ার বেসামরিক উদ্ধারকারী দলের মুখপাত্র ওবাদাহ আলওয়ান ইস্তাম্বুল থেকে বিবিসিকে বলেন, ‘সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল রয়েছে। কিন্তু উদ্ধারকার্য পরিচালনার জন্য তাদের যে ধরনের আধুনিক সরঞ্জাম দরকার তা নেই। নেই জ্বালানি ও খাবার। এ অবস্থায় ইদলিবে বলতে গেলে এ পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্ধারকাজ পরিচালনা করাই সম্ভব হয়নি।’
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর উদ্ধারকার্য পরিচালনার জন্য জন্ম হয় বেসামরিক সংগঠন হোয়াইট হেলমেটস। দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে তারা ইতোমধ্যে খ্যাতি লাভ করেছে।
ফুরিয়ে আসছে খাবার
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপের পরিচালক করিন ফ্লেশার শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বলেছেন, ‘ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় খাবারের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। বিদ্রোহী অধিকৃত অঞ্চলটির প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ডব্লিউএফপির ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবেশী তুরস্ক হয়েই সেখানে ডব্লিউএফপির ত্রাণ প্রবেশ করে। কিন্তু ভূমিকম্পের পর অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় সবকটি ফটক বন্ধ ছিল।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকালে ছয়টি লরি বা বড় ট্রাক ত্রাণ নিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে। তিনটির মধ্যে মাত্র একটি ফটক চালু করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অন্তত আরও একটি ফটক দ্রুত চালু করা দরকার।’ ইতোমধ্যে আরও ১৪টি লরি তুরস্ক থেকে ত্রাণ নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফ্লেশার।
এদিকে সিরিয়ায় শ্লথ উদ্ধার তৎপরতা ও বিলম্বিত ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য জাতিসংঘের প্রোটোকলকে দায়ী করেছেন হোয়াইট হেলমেটসের মুখপাত্র ওবাদাহ আলওয়ান।
আলেপ্পোতে বাশার আল-আসাদ
সিরিয়ার যে কয়টি অঞ্চল ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আলেপ্পো অন্যতম। ভূমিকম্পের পাঁচ দিনের মাথায় শুক্রবার আলেপ্পোর একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। আলেপ্পোর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে তিনি আহতদের মাঝে কিছু সময় কাটান।
নিহত সাড়ে ২১ হাজার ছাড়াল
আল জাজিরা জানায়, ৬ ফেব্রুয়ারির জোড়া ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা সাড়ে ২১ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কে অন্তত ১৮ হাজার ৩৪২ জন। ১৯৯৯ সালে তুরস্কে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিল প্রায় ১৭ হাজার। আর সিরিয়ায় অন্তত ৩ হাজার ৩৭৭ জন। নিহতের সংখ্যা মিনিটে মিনিটে বাড়ছে।
৬ ফেব্রুয়ারি শেষ রাতে তুরস্কের গাজিয়ানতেপে সৃষ্ট ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রতিবেশী সিরিয়াও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আলেপ্পো ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ৯ ঘণ্টার মাথায় ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ দুই ভূমিকম্পের পর অন্তত ৬৪৮টি ছোট ছোট ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।
সূত্র : এএফপি, আল জাজিরা, বিবিসি।