প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:০২ পিএম
ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। ১ ফেব্রুয়ারি জাপানের কেইও বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: সংগৃহীত
পূর্ব এশিয়ায় যা ঘটছে তা নিয়ে ইউরোপ উদাসীন থাকতে পারে না। চীন এই অঞ্চলে নিজেদের সামরিক আধিপাত্য জোরদার করছে। তার এমন সব অস্ত্র তৈরি করছে যা ন্যাটো সদস্যদের আঘাত করতে পারবে। তাই ইন্দো-প্যাসিফিকে সহযোগীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে ন্যাটো।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাপানের কেইও বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘ন্যাটো তার সারা বিশ্বের সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করবে। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফেকে এই সহযোগিতার মাত্রা হবে যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে বেশি। কারণ এটা বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর ও অনিশ্চিত অঞ্চল।’
‘ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, নিরাপত্তার বিষয়টি সারা দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত। ইউরোপে যা ঘটছে পূর্ব এশিয়ায় তার ঢেউ লাগছে। আর পূর্ব এশিয়ায় যা ঘটছে তা ইউরোপকে ভাবাচ্ছে। এ অবস্থায় চীনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে ন্যাটোর যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তা আর চলছে না। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।’
‘চীন ন্যাটোর সরাসরি কোনো প্রতিপক্ষ নয়। তবে দেশটি ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠছে। তারা তাইওয়ানকে হুমকি দিচ্ছে। তাদের সামরিক সক্ষমতা এতটাই বাড়াচ্ছে যে, তা ন্যাটোর সদস্যদের আঘাত হানতে পারে।’
চীনের জবাব
স্টলটেনবার্গের মনোভাব চীন প্রত্যাখ্যান করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে। বুধবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘ন্যাটো একদিকে বলে বলছে, তারা একটি একটি আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা জোট। তাদের এই অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। অন্যদিকে, জোটটি প্রতিনিয়ত তাদের প্রচলিত প্রতিরক্ষা বলয় ও অঞ্চল পরিবর্তন করছে। এশিয়া-প্যাসিফিকে ধীরে ধীরে তাদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। চীনকে হুমকি হিসেবে উপস্থান করছে। এটা বাড়াবাড়ি।’
‘আমরা এ কথা আবার জোর দিয়ে বলতে চাই, এশিয়া-প্যাসিফিককে ভূরাজনৈতিক প্রতিপক্ষের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করা যাবে না। শীতলযুদ্ধ যুগের মানসিকতাকে আমরা কখনও স্বাগত জানাব না।’
ন্যাটোর যাত্রা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশ দখল করে নিতে পারে, এমন একটি শঙ্কা থেকে ১৯৪৯ সালে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) গঠনের উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১২টি দেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সামরিক জোটটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩০। এর মধ্যে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক ছাড়া বাকি দেশগুলো ইউরোপের। সুইডেন ও ফিনল্যান্ডও শিগগরি দেশটির সদস্য হতে যাচ্ছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েভ রাশিয়ার আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘোষণা করা হলেও রয়েছে গেছে অতিকায়হস্তী তুল্য ন্যাটো। প্রতিরক্ষা জোট বলে দাবি করলেও তারা যুগোস্লাভিয়া, বসনিয়া, আফগানিস্তান, ইরাকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হামলা চালিয়েছে।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধও মূলত ন্যাটোর উসকানির কারণে হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকদের একাংশ।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, এশিয়া টাইমস।