সামরিক অভ্যুত্থানের ২ বছর
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৯ পিএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:২২ পিএম
মিয়ানমারের জান্তাবিরোধীরা বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত নীরব ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। তাদের ডাকে অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে। ইয়াঙ্গুনের বাণিজ্যিক এলাকা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরের দিকে তোলা। ছবি : এএফপি
প্রতিবাদের সব স্বাভাবিক পথ যখন রুদ্ধ হয়ে পড়ে, লেলিহান আগুন বুকে নিয়ে কাতরাতে থাকে মানুষ। টগবগ করতে থাকে নতুন যুগের আশায় বিভোর নাগরিকদের মস্তিষ্ক। তখন অনেক সময় অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। মানুষ হয়ে পড়ে মৌন। তবে, পুরো শহর যখন মৌনতার সুতায় বুনা কোনো প্রতিবাদে শামিল হয়, তখন তা হয়ে ওঠে প্রচণ্ড মুখর।
সামরিক অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে মিয়ানমারে জান্তাবিরোধীদের ডাকা ‘নীরব ধর্মঘট’ মৌনতার মুখরতা তৈরি করেছে মিয়ানমারে। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দেশটির প্রধান কিছু শহরে জান্তাবিরোধী নীরব ধর্মঘট পালিত হয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রায় জনশূন্য ছিল ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়, নাইপিতাও, মনিওয়ার মতো প্রধান শহরগুলো। দোকান-পাট ছিল বন্ধ। রাস্তায় ছিল না কোনো গাড়ি। হালকা কুয়াশায় শহরগুলো দিন-দুপুরে ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইয়াঙ্গুনের এক বাসিন্দা দেশটির গণমাধ্যম ইরাবতিকে বলেন, ‘আজ অফিস-আদালত সব খোলা। তাই স্বাভাবিকভাবেই রাস্তা-ঘাট ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু আজ অন্য এক ইয়াঙ্গুন দেখেছি। এতটা নীরব ইয়াঙ্গুন মারাত্মক ভয়ংকর।’
তবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মহড়া দিতে দেখা গেছে। মান্দালয়ের একটি প্রান্তে সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রায় শখানেক মানুষ মিছিল করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।
বিদেশে বিক্ষোভ
দেশে বিক্ষোভ করা সম্ভব না হলেও প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে কয়েকশ মানুষ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেন।
আচারিয়া নামের এক বৌদ্ধ ভিক্ষুক রয়টার্সকে বলেন, ‘চলতি বছরটি গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমার থেকে সামরিক সরকারের মূলোৎপাটনের জন্যই এ বছর আমাদের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে।’
ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায়ও মিয়ানমারের কয়েকশ প্রবাসী জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন।
কী ভাবছে জান্তা
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থসামাজিক ও কূটনৈতিকভাবে চাপে থাকা মিয়ানমারে জান্তার দুই বছরের জরুরি অবস্থা গতকাল শেষ হয়েছে। জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না তা এখনও জানা যায়নি।
২০২০ সালের নভেম্বরে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পায় অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে সু চি ও আরও শীর্ষ রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার করে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সেনাবাহিনী। পরে দফায় দফায় জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়।
সেনাপ্রশাসন চলতি বছরের আগস্টে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এনএলডিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো প্রহসন আখ্যা দিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞা
সামরিক অভ্যুত্থানের দুই বছর পূর্তির প্রাক্কালে গত মঙ্গলবার জান্তার মালিকানাধীন জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ও সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। কিন্তু এশিয়া টাইমসের এক বিশ্লেষণে অভিযোগ করা হয়, ইউক্রেন নিয়ে এক বছরেরও কম সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যতটা করেছে, মিয়ানমার নিয়ে তার এক ভাগও করেনি। এটা হতাশাজনক।
আশায় বসতি
অভ্যুত্থানের পর ২০২১ সালের এপ্রিলেই গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্য সরকার (নাগ)। পরের মাসেই গঠিত হয়েছে গণপ্রতিরক্ষা বাহিনী (পিডিএফ)। এনএলডির নেতৃত্বে গঠিত এসব প্ল্যাটফর্ম দেশটির পুরোনো বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
কাচিন, চীন, কায়াহ (কারেনি) কারেন, মন রাজ্যে সবচেয়ে বেশি সংঘাত হচ্ছে। এসব রাজ্যে জান্তার বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে পিডিএফের আট হাজারের বেশি সংঘাত হয়েছে। অর্থাৎ দৈনিক ১১টির বেশি সংঘাত হয়েছে।
ইরাবতির বিশ্লেষণে বলা হয়, পিডিএফ গোলাবারুদে পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু উল্লিখিত রাজ্যগুলোয় জান্তার নিয়ন্ত্রণ একধরনের বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গত দুবছরের অগ্রগতি চলতি বছরও ধরে রাখা গেলে জান্তার ঐতিহাসিক পরাজয় ঘটবে। গণআকাঙ্ক্ষার জয় হবে। এটি মিয়ানমারে নতুন যুগের সূচনা করবে।
সূত্র : রয়টার্স, ইরাবতি।