প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৪৭ এএম
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসাবে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন যুক্তরষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তাকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় মঙ্গলবার স্বাগত জানান ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস (ডানে)। ছবি : এএফপি
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলের নতুন অর্থমন্ত্রী ও ইহুদি দলের প্রধান বেজালেল স্মোট্রিচের ফ্যাসিবাদিতার স্বীকারোক্তির একটি অডিও প্রকাশ্যে আসার পর তিনি বিদ্রূপের সঙ্গে তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ‘আমি একজন কট্টর ডানপন্থি সমকামী ব্যক্তি, বর্ণবাদী, ফ্যাসিবাদী। এ কথাই আমার সম্প্রদায়ের প্রতি আমার আমানত।’
বেজালেল স্মোট্রিচ এবং তার সহকর্মীরা বিশ্বাস করেন যে, প্রথমত, ইসরায়েল ইহুদি এবং গণতান্ত্রিক উভয়ই হতে পারে না এবং হওয়া উচিত নয়। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলের একচেটিয়া অধিকার রয়েছে পায়ের তলার জমিকে ‘ইসরায়েলের ভূমি’ বলার এবং তৃতীয়ত, ইসরায়েলকে উদারপন্থি পশ্চিমাদের পথ থেকে সাবধান থাকতে হবে ও যুক্তরাষ্ট্রের হুকুম তাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
আজকের ইসরায়েলের ধর্মান্ধরা সব ফিলিস্তিনি বাসিন্দাকে ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ থেকে বিতাড়িত করতে ইহুদিবাদীদের ব্যর্থতার জন্য বিলাপ করে। তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের পূর্বপুরুষদের ১৯৪৭-১৯৪৯ সাল পর্যন্ত কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করা সঠিক ছিল।
আজকের অনেক ধর্মান্ধকে প্রয়াত গুরু রাব্বি মীর কাহানে ১৯৮০ সালের একটি বইতে যুক্তি দিয়েছিলেন, ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই যেতে হবে এবং ফিলিস্তিনিরা ‘ইহুদি রাষ্ট্রের’ শরীরে একটি ‘ক্যানসার’, যাকে যেভাবেই হোক অপসারণ করতে হবে।
কাহানের বর্তমান শিষ্যরা জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের মতো বিশ্বাস করেন যে, ইসরায়েল তার ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ছাড়াই ভালো। কিন্তু তারা মনে করে যদি ফিলিস্তিনিদের থাকতেই হয়, তবে তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে থাকতে পারে। তাদের মূল শপথ তাদের ইহুদি প্রভুদের প্রতি আনুগত্য।
তাদের রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত অংশীদারের বিপরীতে নেতানিয়াহু ২০১৮ সালে ‘ইসরায়েলকে ইহুদি জনগণের জাতি-রাষ্ট্র’-বিষয়ক বর্ণবাদী আইন পাস করতে সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু ‘ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’কে ধ্বংস করে চলেছেন কাহানের অনুসারীরা। তারা ইহুদি আধিপত্য নিয়ে গর্ব করে ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ কায়েমে অগ্রগামী।
ইহুদি ধর্মান্ধরা বিশ্বাস করে যে, ইসরায়েলকে অবশ্যই একটি ধর্মতান্ত্রিক দেশ হতে হবে, অন্যদিকে, উদারপন্থিরা বিশ্বাস করে যে, ইসরায়েল ইহুদি এবং গণতান্ত্রিক দেশ হতে পারে। ফিলিস্তিনি চায় ইসরায়েলকে অবশ্যই সত্যিকারের গণতন্ত্রের ভিত্তিতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিতে থাকতে হবে।
অন্য সব ধর্মীয় ধর্মান্ধদের মতো ইসরায়েলের ধর্মান্ধরাও বিশ্বাস করে যে, সর্বশক্তিমানের জন্য লড়াই করার সময় ‘শেষ উপায়কে সমর্থন করা।’ এর মধ্যে রয়েছে জেরুজালেম এবং এর পবিত্র স্থানগুলোর জোরপূর্বক পুনঃসংশোধন বা ইহুদীকরণ, যার মধ্যে রয়েছে আল-আকসা মসজিদ, ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থানের বিপর্যয়মূলক প্রভাবনির্বিশেষে শান্তি এবং সহাবস্থানকে অভিশপ্ত করা।
বলা বাহুল্য, পশ্চিম জেরুজালেমের সাবেক ডেপুটি মেয়র মেরন বেনভেনিস্টির ভাষায়, বিজয়ী ইহুদিদের মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থান দখলের বিষয়ে অভিনব কিছু নেই। ইহুদিবাদী প্রবীণরা যেসব ছেড়ে দিয়েছিল, নতুন ধর্মান্ধরা সেসব দখলে নিচ্ছে ধর্মীয় উদ্যোগের নামে।
ইসরায়েলি উগ্রবাদের সঙ্গে মেসিয়ানিক ইহুদি ধর্মের সংমিশ্রণে এই ধর্মান্ধরা সংকল্পবদ্ধ এবং তারা বিপজ্জনক। তারা দখলকে আরও তীব্র করার নিমিত্তে অবৈধ ইহুদি বসতিগুলোকে বহুগুণে বৃদ্ধি করার বিষয়ে অগ্রগামী।
এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, তারা দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন এবং সমগ্র শান্তি প্রক্রিয়ার শব্দার্থকে প্রত্যাখ্যান করে। এই মৌলবাদীরা একটি রাজ্য চায়, প্রজাতন্ত্র নয়। তারা চায় ইসরায়েল ইহুদি আইন ও ঐতিহ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করুক।
যদিও তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর আর্থিক এবং অন্যান্য সহায়তা পায়, তবু তারা বিশ্বাস করে যে, ইসরায়েলের ভূমিতে ইহুদিদের মুক্তি হতে হবে অবশ্যই বাইবেলের নীতি অনুযায়ী।
এর অর্থ তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদারপন্থি ইসরায়েলিরা ক্ষমতায় থাকা ধর্মান্ধ শক্তির বিরোধিতা করে। তারা বিশ্বাস করে, ‘ইসরায়েলকে একটি অন্তর্নিহিত, সন্দেহজনক এবং অরাজক স্পার্টায় পরিণত করছে’ মৌলবাদীরা। ইসরায়েলি সাংবাদিক আরি শাভিতের বই ‘মাই প্রমিজড ল্যান্ড’-এ এমনই বলা হয়েছে। কিন্তু, তাদের অধিকাংশই হিংসাত্মক দখলকে উপেক্ষা করে শুধু সরকারের ঘরোয়া এজেন্ডায় মনোনিবেশ করেছে।
ইসরায়েলি ধর্মান্ধতা কয়েক দশকের যুদ্ধ, দখলদারত্ব এবং উপনিবেশের চূড়ান্ত পরিণতি। ইসরায়েলের ধর্মান্ধ এবং ফ্যাসিস্টরা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের খরচে তাদের শক্তির ভিত্তি প্রসারিত করেছে। সূত্র : আল জাজিরা।