× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সামরিক অভ্যুত্থানের ২ বছর

নতুন যুগের আশায় লড়াইয়ে মিয়ানমারের জনগণ

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:১৪ পিএম

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৫ পিএম

জান্তাবিরোধী পিডিএফের সদস্যরা। গত আগস্টে কাচিনে। ছবি: সংগৃহীত

জান্তাবিরোধী পিডিএফের সদস্যরা। গত আগস্টে কাচিনে। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ১২ গুণ বড়। কিন্তু জনসংখ্যা বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশেরও কম। চীন ও ভারতের মতো দুই বড় দেশের সীমান্তবর্তী এই দেশ সামরিক সমস্যায় জর্জরিত। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানে কয়েক বছর আগে শুরু হওয়া গণতন্ত্রের হাওয়াকে আবার কলুষিত করছে। কিন্তু এবার জান্তাবিরোধী নতুন ধরনের লড়াই-সংগ্রাম চোখে পড়ছে। 

প্রবাস থেকে পরিচালিত মিয়ানমারের গণমাধ্যম দ্য ইরাবতিতে সামরিক শাসনের দুই বছর নিয়ে একটি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে শুরুতেই সাংবিধানিক সংকটের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে। 

সাংবিধানিক সংকট

২০০৮ সালে তৎকালীন জান্তা সরকার মিয়ানমারের সংবিধান বাতিল ঘোষণা করে। অবশ্য ওই সংবিধানে জনগণের আশা করার মতো তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু তারপরও সংবিধানের একটা আনুষ্ঠানিক গুরুত্ব থাকে। 

২০১১ সালে অং সান সু চির নেতৃত্বে আধা-সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সংবিধান নতুন করে প্রায়। সামরিক দমন-পীড়ন কমবে মানুষের মধ্যে এমন একটা আশা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। উর্দি পরা লোকজন রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে বিদায় নেবেন, এমনটাই ভেবেছিলেন সাধারণ মানুষ। 

২০১৫ সালে সু চির পার্টি ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল জয় নিয়ে সরকার গঠনের পর মিয়ানমারের জনগণের প্রত্যাশা আরও বেড়ে যায়। মিয়ানমার এক দিন পূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরবে, এমনটাই ধরে নিয়েছিল অনেকে। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। 

২০২০ সালের ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে এনএলাডি দ্বিতীয় দফায় ভূমিধস জয় পাওয়ার পর জান্তার মধ্যে পুরোনো রোগ চাঙা হয়ে ওঠে। কারচুপির অভিযোগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চিসহ তার দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে। ছেঁটে দেওয়া হয় সংবিধানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারা-উপধারা। পুরোনো কাদায় নতুন করে আটকে যায় মিয়ানমারের নতুন যাত্রা। 

বিধ্বস্ত অর্থনীতি

দীর্ঘ ৪৯ বছরের সামরিক শাসনের পর ২০১১ সালে আধা-সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারে নতুন করে দূতাবাস খুলে। বাড়তে থাকে বৈদেশিক বিনিয়োগ। 

বিশ্বের অন্য দেশের মতো করোনার ধাক্কায় এক দশক আগে শুরু হওয়া মিয়ানমারের গণতন্ত্র অভিমুখে যাত্রা ও অর্থনৈতিক তাজাভাব মলিন হতে শুরু করে। সামরিক অভ্যুত্থান সেই খারাপ পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর করে তুলেছে। 

ইতোমধ্যে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি মিয়ানমার থেকে তাদের ব্যবসা সরিয়ে নিয়েছে। বিদেশির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগও কমেছে। 

ইউক্রেন যুদ্ধের আঁচ লাগছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উর্বর দেশটিতে। গত দুই বছরে দেশটির মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০০ গুণ বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা ঘাটতির কারণে জরুরি ওষুধপত্র আমদানি করা যাচ্ছে না। জ্বালানির দাম প্রায় দুই গুণ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে মিয়ানমারের মোট দেশজ উৎপাদন ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস করা হয়েছে, যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশ কম।  

আন্তর্জাতিক চাপ

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের বড় ধরনের আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে মিয়ানমার জান্তা। ২০২১ সালের এপ্রিলেই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতিপুঞ্জের জোট (আসিয়ান) সংকট সমাধানে পাঁচ দফা দেয়, যা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে শক্তিশালী আঞ্চলিক জোটটির নিয়মিত বৈঠকে জান্তার প্রতিনিধিরা অংশ নিতে পারছেন না। 

গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘ মিয়ানমার নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। এটি মিয়ানমার নিয়ে জাতিসংঘের ৭০ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো প্রস্তাব পাস। এতে জান্তার তথাকথিত মিত্র রাশিয়া ও চীন ভেটো দেয়নি।

একই মাসে যুক্তরাষ্ট্র বার্মা অ্যাক্ট নামের একটি আইন পাস করে। এই আইনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের দেশটিতে কাজ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। 

তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন জান্তা সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই চাপে রয়েছে জান্তা সরকার। 

ইরাবতির বিশ্লেষণে বলা হয়, অনেকে বলে থাকেন, চীন, রাশিয়া, ভারত ও জাপান জান্তার সঙ্গে হাত মিলাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে তা ঠিক, কিন্তু জান্তার সঙ্গে এসব দেশের সম্পর্ক এতটা সহজ নয়। এতে ব্যবসায়িক, ‍ভূরাজনৈতিক অনেক হিসাব আছে। জান্তাবিরোধীদের প্রতিরোধ আরও জোরালো হলে তারাও অবস্থান বদলাতে বাধ্য হবে।  

অগ্নিপরীক্ষার বছর

৭৫ বছরের ইতিহাসে কোনো না কোনো মাত্রার  গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছে মিয়ানমার। আগের সব গৃহযুদ্ধ ছিল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর গৃহযুদ্ধ। কিন্তু এবার নতুন ধরনের গৃহযুদ্ধের মুখে পড়েছে জান্তা সরকার। 

অভ্যুত্থানের পর ২০২১ সালের এপ্রিলেই গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্য সরকার (নাগ)। পরের মাসেই গঠিত হয়েছে গণপ্রতিরক্ষা বাহিনী (পিডিএফ)। এনএলডির নেতৃত্ব গঠিত এসব প্ল্যাটফর্ম দেশটির পুরোনো বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। 

প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে পিডিএফের সদস্যরা। ২০২১ সালে আপার মিয়ানমারের কোনো এক স্থানে। ছবি: সংগৃহীত 

কাচিন, চীন, কায়াহ (কারেনি) কারেন, মন রাজ্যে সবচেয়ে বেশি সংঘাত হচ্ছে। এসব রাজ্যে জান্তার বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে পিডিএফের আট হাজারের বেশি সংঘাত হয়েছে। অর্থাৎ দৈনিক ১১টির বেশি সংঘাত হয়েছে। 

ইরাবতির বিশ্লেষণে বলা হয়, পিডিএফ গোলা-বারুদে পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু উল্লিখিত রাজ্যগুলোয় জান্তার নিয়ন্ত্রণ এক ধরনের ‍বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গত দুবছরের অগ্রগতি চলতি বছরও ধরে রাখা গেলে জান্তার ঐতিহাসিক পরাজয় ঘটবে। গণআকাঙ্ক্ষার জয় হবে। এটি মিয়ানমারে নতুন যুগের সূচনা করবে। 

সূত্র: ইরাবতি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা