প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২২ ১৩:২১ পিএম
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২২ ১৩:৪৮ পিএম
পাকিস্তানে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেলুচিস্তান প্রদেশ
পাকিস্তানে টানা অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় প্রাণহানি ৯০০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে তিন শতাধিক শিশু। পানির তোড়ে ভেসে গেছে হাজারো ঘর। জুনের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এ অবস্থায় দেশটির জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শেরি রেহমান আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
শেরি রেহমানের বরাতে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক মানুষ আশ্রয় ও খাবারের সংকটে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে আশ্রয়হীন ও খাদ্যহীন হয়েছে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এটি মারাত্মক মানবিক সংকট।’
পাকিস্তানের এই মন্ত্রী আরও বলেন, চলমান বন্যায় মৃতদের মধ্যে অন্তত ৩২৬ শিশু রয়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঞ্জাব ও খাইবার পাকতুনখাওয়াতে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয় শিশুও রয়েছে। তারা বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে।
জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রমের সমন্বয় কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) তথ্যমতে, পাকিস্তানে বন্যা ও ভারী বৃষ্টিপাতে অন্তত ২৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমপক্ষে ৯৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শেরি রেহমান বলেন, চলমান বন্যায় বহু শিশুর প্রাণহানি ছাড়াও লাখো ঘরবাড়ি ও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেলুচিস্তান ও সিন্ধু প্রদেশ।
সিন্ধুতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৯৫ ও বেলুচিস্তানে ৩৭৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান এবং পাঞ্জাব প্রদেশে নতুন করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি করাচিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়
ওসিএইচএ বলছে, এ বন্যায় বেলুচিস্তানে অন্তত পাঁচ লাখ গবাদি পশু মারা গেছে। তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা ও ১২৯টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বন্যাকবলিত এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
চলতি বর্ষা মৌসুমে নজিরবিহীন বৃষ্টির কারণে পাকিস্তানে প্রায় সবগুলো প্রদেশেই বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পাশাপাশি ভূমিধসে বহু প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়। বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসন ও অবকাঠামো মেরামতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) জানিয়েছে, বন্যায় ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য আরও আন্তর্জাতিক অর্থায়নের প্রয়োজন।
এনডিএমএর সংবাদ সম্মেলনে শেরি রেহমান বলেন, ‘২০১০ সালের পর এটি সবচেয়ে বড় বন্যা। এতে বেলুচিস্তানের বেশিরভাগ এলাকা, দক্ষিণ পাঞ্চাব ও সিন্ধুর ৩০টি জেলা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বহু মানুষ ও গবাদি পশু বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে; ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শস্য।’
ভারী বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতে গত সপ্তাহ থেকে বেলুচিস্তান ও সিন্ধুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ইসলামাবাদে চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, পাকিস্তানকে দ্রুত জরুরি মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে। দেশটির বন্যাকবলিত এলাকার জন্য সহায়তার মধ্যে ৩ লাখ ডলার ও ২৫ হাজার তাবুও থাকছে।
পাকিস্তানে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তবে গ্রীষ্মে এমন পরিস্থিতি কখনো হয় না। শেরি রেহমান সিএনএনকে বলেন, ‘এবার পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচিতে কয়েক ঘণ্টায় ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এমন কোনো শহর নেই যে এতো কম সময়ে এতো বেশি পানি ব্যবস্থাপনা করতে পারে।’
এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য আট হাজার কোটি রুপি এবং তাদের পুনর্বাসনে আরও কয়েকশ কোটি রুপি দরকার।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু হওয়া প্রতি জনের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ২৫ হাজার রুপি করে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
প্রবা/এইচকে