প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:৪৫ এএম
স্কুলে ঢুকতে না পেরে কাঁদছে ক'জন আফগান মেয়েরা।
আফগানিস্তানে তালেবান মৌখিকভাবে মেয়েদের ব্যাপারে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের বেলায় তার কিছুই দেখা যায়নি। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে নারীদের ওপর নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে তারা। যেগুলো ঘরে আটকে ফেলেছে নারীদের।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নারীদের ওপর আরোপিত সে বিধিনিষেধগুলো।
পুরুষ মন্ত্রিসভা
শুরুতেই তালেবানরা যা করেছে তা হলো, পুরুষ মন্ত্রিসভা গড়ে তোলা এবং তাতে নারীদের না রাখা। ২০০১ সালের পর হামিদ কারজাই এবং পরে আশরাফ গনি সরকার রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা বাড়ানোর ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। সংসদ থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভায় তারা জায়গা পেয়েছে। রাষ্ট্রদূত করেও বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ২০২১ সালের তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করে, তাতে একজন নারীও ছিল না।
সরকারি কর্মচারী
ক্ষমতা নেওয়ার এক মাসের মধ্যে তালেবান সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেও নারীদের সরিয়ে দেওয়া শুরু করে। নারীদের অফিসে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শুধু কাবুল পৌরসভার নারী কর্মচারীদের অফিসে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। কারণ, তাদের কাজগুলো কোনো পুরুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। পরে ২০২২ সালের জুনে তালেবান সরকার জানায়, নারীদের বাড়িতেই থাকতে হবে এবং তাদের জায়গায় বড়জোর কোনো পুরুষ সদস্য গিয়ে দাপ্তরিক কাজে অংশ নিতে পারবেন। শুধু সরকারি কর্মচারীরাই নয়, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশে কর্মরত নারী, এমনকি নারী বিচারকদেরও এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
ক্রীড়া
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নারীদের খেলাধুলার ওপরও অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর তালেবান সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপমন্ত্রী আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক বলেন, খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ শুধু ‘অনুচিতই নয়, একই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয়।’ এরপর ১৭ মাস পার হয়ে গেছে। এখনও আফগান নারীরা দেশে বা বিদেশে কোনো ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারছে না।
শিক্ষার্থীদের আলাদা করে দেওয়া
ক্ষমতা নেওয়ার এক মাসের মাথায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে শিক্ষাদানের নির্দেশ দেয় তালেবান সরকার। জানানো হয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে।
প্রথমে শ্রেণিকক্ষে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের দুই পাশে বসিয়ে মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে শ্রেণিকক্ষই আলাদা করে দেওয়া হয়। এরপর নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা পাঠদানের দিন ধার্য করে দেওয়া হয়।
নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়
১৭ সেপ্টেম্বর নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম বদলে দেওয়া হয়। গড়ে তোলা হয় নৈতিকতা প্রচার এবং অনৈতিকতারোধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিস। এর মধ্য দিয়ে এক অর্থে বিলুপ্ত হয়ে যায় আগের মন্ত্রণালয়টি।
মাধ্যমিক স্কুল
২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেটিতে শুধু পুরুষ শিক্ষক এবং ছাত্রদের স্কুলে ফিরতে বলা হয়। কিন্তু নারীদের মাধ্যমিক স্কুলের (সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়েরা স্কুলে ফিরতে পারেনি। শুধু দেশের কিছু জায়গায় গত ডিসেম্বরে দ্বাদশ শ্রেণির মেয়েদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
টিভি এবং অভিনয়
টিভি নাটকে নারীদের অভিনয় নিষিদ্ধ করা হয় ২০২১ সালের নভেম্বরে। ক্যামেরার সামনে মাথায় হিজাব পরার নির্দেশ দেওয়া হয় নারী সাংবাদিক এবং উপস্থাপকদের। এমনকি নাটকে নারী কণ্ঠ দেওয়ার ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
ভ্রমণ
২০২১ সালের ডিসেম্বরে নারীদের যাতায়াত এবং ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। নৈতিকতাবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, হিজাববিহীন নারীদের যেন ট্যাক্সিতে না ওঠানো হয়। এ ছাড়া পুরুষ সঙ্গী (বাবা, পুত্র, স্বামী বা ভাই) না থাকলে কোনো নারীকে ৪৫ মাইলের বেশি দূরে ভ্রমণ নিষেধ করা হয়।
গাড়িচালনা
হেরাত ও কাবুলের অনেক নারী ড্রাইভিং ক্লাস করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। অনেকে আবার অভিযোগ করেছেন, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকার নতুন করে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে স্বীকারও করেছেন তালেবানের একজন কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়
তালেবানের উচ্চশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রণালয় নারীদের উচ্চশিক্ষা বন্ধ করে দেয় ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর। সব সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মেয়েদের ভর্তি নিষিদ্ধ করা হয়।
অলাভজনক সংস্থা
তালেবান সরকার সব জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা বা এনজিওতে নারীদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করে ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর। সূত্র: বিবিসি বাংলা