× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কাশ্মীরের সংঘাতময় সীমান্তে প্রসবকালীন ঝুঁকিতে নারীরা

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৪৯ এএম

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছের গ্রামগুলোর মানুষ প্রতি মূহূর্ত কাটান চরম আতঙ্কের মধ্যে। এখানকার প্রায় প্রতিটি পরিবারেরই কোনও না কোনও সদস্য সীমান্ত সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। সেই সব প্রিয়জনকে হারানোর দুঃসহ স্মৃতি তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত।

এখানে যুদ্ধবিততি কার্যকর থাকলেও, সেটা তাদের আতঙ্ক দূর করতে যথেষ্ট নয়। কারণ, তারা বিগত বছরগুলোতে এই যুদ্ধবিরিতি লঙ্ঘনের অনেক ঘটনার সাক্ষী। সেসব যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় ঝরেছে তাজা প্রাণ। সর্বোপরি এখানে সর্বদা বিরাজ করে যুদ্ধাবস্তা। এরকম অবস্থায় সেখানে বসবাস করে স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশা করা অমূলক। তবে, এই অস্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই অঞ্চলের গর্ভবতী নারীরা।  

২০২০ সালের জুন মাসে সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন আদিবা বেগম। তার বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে একটি গ্রামে একজন নারী গোলাগুলিতে মারা যায়। আর আদিবা এই খবর পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলেন। এরপর থেকে তিনি এই দুঃশ্চিন্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঁপতে কাঁপতেন যে, তিনি এবং তার অনাগত সন্তান একই পরিণতি হতে পারে। যে নারীটি মারা গিয়েছিল সে-ও আদিবার মতো জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছের একটি গ্রামে বাস করতেন।

আদিবা তার সন্তান ও তার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চরম আতঙ্কিত ছিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি আমাকে, আমার অনাগত সন্তান এবং আমার স্বামীকে হত্যা করার জন্য গোলাগুলির জন্য অপেক্ষা করতে পারতাম না। তাই আমরা অন্যত্র যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

এক সপ্তাহ পরে তিনি এবং তার স্বামী উমর লোন গ্রামের বাইরে যাত্রা করেন। প্রথমে বাসে করে এবং তারপরে একটি স্থানীয় ট্যাক্সিতে করে তারা বারামুল্লা শহরে যান। সেখানে তাদের সরকারী মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল কিংবা সরকারি জেলা হাসপাতাল সহজে ভর্তি করানো যাবে। উমর লোন বলেন, ‘এটি একটি কঠিন যাত্রা ছিল।’

আড়াই মাস পর একটি সুস্থ মেয়ে শিশুর জন্ম দেন আদিবা। হাতলঙ্গায় সহিংসতার ঝুঁকি এড়াতে এবং বাড়িতে ফিরে যাওয়া সহজ না এবং ওষুধ সংগ্রহ করতে এই দম্পতি বারামুল্লা শহরে অতিরিক্ত এক মাস ছিলেন।

হাতলাঙ্গার মতো নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছের গ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে সংঘাতের ছায়ায় বসবাস করছেন। হাতলাঙ্গা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ভারতীয় দিকের শেষ সেক্টর উরিতে অবস্থিত। ২০১১ সালে পরিচালিত সর্বশেষ আদমশুমারি অনুসারে এখানকার জনসংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি। এই সেক্টরে ৪১টি গ্রাম রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১২টি হাতলঙ্গার মতো নিয়ন্ত্রণ রেখার পাশে অবস্থিত।

যদিও দুই দেশ ২০০৩ সালে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল, তবুও এই অঞ্চলটি কয়েক বছর ধরে নিয়মিত আন্তঃসীমান্ত সহিংসতার শিকার হয়েছে। সহিংসতার সম্ভবত সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত সামনে আসে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। চার জঙ্গি উরিতে একটি সেনা শিবিরে হামলা চালিয়ে ১৭ ভারতীয় সেনাকে হত্যা করে। এরপরই আন্তঃসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এরপর সহিংসতা বছরের পর বছর পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। ২০২০ সালে এই অঞ্চলে ৫,১৩৩ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালে এর সংখ্যা ছিল ২১৪০টি এবং ২০১৯ সালে ৩৪৭৯টি।

তারপর ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গ্রামগুলো খবর পেয়েছিল যে, ভারত ও পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীর এবং অন্যান্য রাজ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কঠোরভাবে মেনে চলতে সম্মত হয়েছে।

কিন্তু, এরপরও সহিংসতা পুরোপুরি কমেনি। ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর ২০ বছর বয়সী একটি মেয়ে হাতলাঙ্গায় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পা হারিয়েছিল। ৩৭ বছর আগে মাইন বিস্ফোরণে তার পা হারানোর বিষয়ে ওই গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোহাম্মদ ভাট বলেন, ‘আমরা সবাই সংঘর্ষের এক একজন হতাহত। আমরা আমাদের মধ্যে এই ব্যথার অনুভূতি নিয়েই বাস করি, এটি আমাদের জীবনের একটি অংশ।’

উরির গড়কোট গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব লোনও একই অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্ষতগুলো অনেক দিন ধরেই কেটে গেছে। আমরা জানি না যে কখন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হবে এবং আমাদের শান্তিতে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে।’

যদিও এই সংঘর্ষের ফলে ওই অঞ্চলের পুরো জনগণই ভুগছে, তথাপি গর্ভবতী দুর্বল স্বাস্থ্যে মায়েরা নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবার সমস্যায় ভুগছেন চরমভাবে।

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে উরি শহরের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ফারখান্দা আজিজ ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তিনি তার স্বামী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ওষুধ কিনতে এবং তারপরে সেগুলো সংরক্ষণ করতে বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি শেষ মুহূর্তে ওষুধের অভাবের ঝুঁকি নিতে পারি না। যে কেউ শহরের বাজারে বা এমনকি শ্রীনগরে যায়, আমি তাদেরকে আমার জন্য ওষুধ আনতে বলি। আমি প্রসবকালীন ঝুঁকি এড়াতে চাই।’

যদিও তিনি উরি উপজেলা হাসপাতাল থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বের মধ্যে বাস করেন, তবুও এই এলাকায় সেনাবাহিনীর ট্রাক এবং অন্যান্য সামরিক যানবাহনের ক্রমাগত উপস্থিতির কারণে তিনি উদ্বিগ্ন।

ফারখান্দা  বলেন, ‘আমি শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যে, যুদ্ধবিরতি বহাল থাকুক। আমি আমার সন্তানকে শান্তিতে পৃথিবীতে আনতে চাই।’

সূত্র : স্ক্রল ইন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা