প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৫১ এএম
জাসিন্ডা আরডার্ন। ফাইল ফটো
জাসিন্ডা আরডার্ন সেসব বিরল নেতাদের মধ্যে একজন, যিনি রাজনীতির মঞ্চ থেকে স্বেচ্ছায় বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করা হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তার আর দেওয়ার মতো কিছু নেই এবং তিনি পুনর্নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অথচ বর্তমানে বিশ্বে এমন অনেক নেতা রয়েছেন, যারা দীর্ঘ সময় ক্ষমতার গদি আঁকড়ে রাখেন এবং একসময় বিদ্রোহী সহকর্মীদের কাছে ক্ষমতা হারান। এদের অনেকে প্রত্যাখ্যাত হন নিজ দলের কাছে। অনেকের দিক থেকে আবার মুখ ফিরিয়ে নেন ভোটাররা। কিন্তু আরডার্ন ব্যতিক্রম। তার ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তই তাকে যেন আরও ক্ষমতাশালী করেছে।
যে সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো অহংয়ে জর্জরিত বিশ্ব, সে সময় আরডার্ন নিজেকে প্রমাণ করেছেন একজন প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ হিসেবে। তিনি যেভাবে কোভিড-১৯ মহামারি এবং ২০১৯ সালে দুটি মসজিদে গণগুলির ঘটনা সামাল দিয়েছেন, তাতে শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, দেশটির বাইরে থেকেও এসেছে প্রশংসা।
একজন সমালোচক অবশ্য তর্ক জুড়ে দিতে পারেন- আরডার্নের জনপ্রিয়তা কমে এসেছিল, তার লেবার পার্টির আমলে অপরাধ বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে ইত্যাদি। তবে এখানেও পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলা যায়, অক্টোবরের নির্বাচনের আগে তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর সময় পেতেন।
আরডার্নের পথচলা মসৃণ ছিল না। ক্ষমতার জন্য তাকেও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল। তিনি লিঙ্গ এবং বয়সের কারণে হুমকিও পেয়েছেন অতীতে। অনেক রাজনীতিবিদই উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ত্যাগের পর ক্ষমতার অধিকারী হয়ে তা স্বেচ্ছায় ছাড়তে চান না।
কিন্তু আরডার্ন তা করেননি। তিনি বলেছেন, তার মেয়েকে সময় দেবেন। দীর্ঘদিনের সঙ্গীকে বিয়ে করবেন। এককথায় পরিবারের জন্য বিদায় নিচ্ছেন তিনি। রাজনীতির মহলে পরিবারের জন্য বিদায় নেওয়ার অজুহাত দেওয়ার নজির বেশ পুরোনো। কিন্তু আরডার্নের বেলায় এটি ভিন্ন। তিনি আদতেই পরিবারে জন্য বিদায় নিচ্ছেন। তার মতে, এখন সময় হয়েছে ক্ষমতা ছাড়ার। নিজ পদত্যাগপত্রে ক্লান্ত আরডার্ন লিখেছেন, ‘রাজনীতিবিদরাও মানুষ। আমরা যতক্ষণ চাই আমাদের সব দিয়ে যেতে পারি, কিন্তু পরে গিয়ে বিদায়ের ঘণ্টা বাজে। আমার জন্য সে সময় হয়েছে।’
প্রখ্যাত মার্কিন রাজনীতিবিদ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সঙ্গে মিল রয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী আরডার্নের। ১৭৯৬ সালে নিজের বিদায়ি ভাষণে ওয়াশিংটন বলেছিলেন, ‘আমার সেবার পক্ষে যত কথাই বলা হোক না কেন, আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনি আমার অবসর নেওয়ার সংকল্পকে অস্বীকার করবেন না।’
গণতন্ত্রে সবচেয়ে কঠিন বিষয় ক্ষমতা জেতা নয়, কখন সেটির ইতি টানতে হবে তা জানা। এটি প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেমন ধরতে পেরেছিলেন। আরডার্নও পেরেছেন।
সিএনএন-এর হোয়াইট হাউস প্রতিবেদক স্টিফেন কলিনসনের বিশ্লেষণ অবলম্বনে