প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৫৪ এএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৫৪ এএম
বায়ুমণ্ডল থেকে ব্যাপক হারে কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ করা না হলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন থেকে পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখা অসম্ভব। গতকাল বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বাধীন গবেষকদের বৈশ্বিক এক মূল্যায়নে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
জলবায়ু নীতি, বিনিয়োগ এবং গবেষণার ক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন নিঃসরণের বিকল্প সমাধানটি প্রান্তিক পর্যায়ে ছিল। কিন্তু গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ কমাতে বিশ্বের দেশগুলোর ক্রমাগত ব্যর্থতা এই বিকল্পটিকে সামনে আনতে বাধ্য করেছে। বর্তমান বিশ্বে প্রতি বছর ছয় হাজার কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে।
স্টেট অব কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শোষণের দুটি উপায় হলো। প্রথাগত প্রাকৃতিক উপায়, পুনরায় বনায়ন। কারণ গাছপালা কার্বন শোষণ করে। দ্বিতীয় উপায় হলো, কারখানার মতো যন্ত্রপাতি বসিয়ে সেই যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শোষণ করে তা ভূগর্ভে সংরক্ষণ করা। বর্তমানে এই দুটি উপায়ে বছরে মাত্র ২০০ কোটি টন কার্বন অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে।
সরাসরি বায়ু থেকে কার্বন অপসারণের ‘অভিনব’ প্রযুক্তির মাধ্যমে মাত্র দশমিক ১ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
জাতিসংঘের ক্লাইমেট সায়েন্স অ্যাডভাইজরি বডি (আইপিসিসি) বলেছে, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাকশিল্প যুগের তুলনায় দেড় ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে এই দশকের শেষ নাগাদ কার্বন নিঃসরণ ২০২০ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। এবং যদি প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে হয় তবে চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝিতে কার্বন নিঃসরণ শূন্য করতে হবে।
উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রতিবেদনের সহ-লেখক গ্রেগরি নেমেট এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা বেশি বা কম যে মাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ করি না কেন, আমাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে হবে।’
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে সেখানে ২০২২ সালে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ রেকর্ড ছুঁইছুঁই। অর্থাৎ কার্বন নিঃসরণ কমা তো দূরের কথা আরও বাড়ছে। তাই বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণের (কার্বন ডাই-অক্সাইড রিমুভাল-সিডিআর) বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ চার হাজার ৫০০ কোটি থেকে ১০ হাজার কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডল থেকে বের করতে হবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে করা ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দুই ডিগ্রির নিচে বজায় রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন নিঃসরণের নতুন প্রযুক্তির স্থাপনা ৩০ গুণ এবং ২১০০ সালের মধ্যে এক হাজারগুণ বাড়াতে হবে।
২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিডিআর বা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণের প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা হয় ২০০ মিলিয়ন ডলার। এর তিন চতুর্থাংশ সরাসরি বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন নিঃসরণে কাজ করছে। এর একটি বড় অংশ কাজ করছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ক্লাইমওয়ার্কসে। ফার্মটি গত সপ্তাহে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণ করে তা মাটিতে পুতে ফেলার ঘোষণা দেয়। সূত্র: এএফপি