পদত্যাগের ঘোষণার পর জাসিন্ডা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:০৯ পিএম
পদত্যাগের ঘোষণার পর হবু বর ক্লার্ক গেফোর্ডের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। ১৯ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের নেপিয়ারের ওয়ার মেমোরিয়াল হলে। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হয়ে রেকর্ড গড়েছেন। করোনা মহামারি, সন্ত্রাসী হামলা ও আবাসন সমস্যার মতো সংকট শক্তহাতে সামলেছেন। অনেকে মনে করেন, প্রায় নির্দ্বিধায় টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। অথচ সে পথে পা বাড়ালেন না। ঘোষণা দিলেন পদত্যাগের। এমন ঘোষণা প্রশংসায় ভাসছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) নিজের দল লেবার পার্টির চলতি বছরের প্রথম বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকটির প্রথম সেশনেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন ৪২ বছর বয়সী জাসিন্ডা আরডার্ন। নিয়ম অনুয়ায়ী আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব শেষ হবে। কিন্তু অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত তিনি মধ্যবর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে, নিজ দল লেবার পার্টি নতুন নেতা নির্বাচন করতে রবিবার (১১ জানুয়ারি) ভোটাভুটিতে অংশ নেবে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে রাজধানী ওয়েলিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে জাসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এ পদ বড় ধরনের দায়িত্বশীলতা দাবি করে। এ গুরুদায়িত্ব আমি আর পালন করতে চাই কিনা, গত গ্রীষ্মে তা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, না এই দায়িত্বের প্রতি সুবিচার করার মতো আমার আর যথেষ্ট শক্তি নেই। তাই অত্যন্ত সম্মানজনক এ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জাসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ‘এখনও তেমন কিছু ভাবিনি। তবে হ্যাঁ, বিয়ে করব। আমার মেয়ে নেভ চলতি বছর থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু করবে। তাকে আরও সময় দেওয়া যাবে।’
পরিবার
জাসিন্ড এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেননি। তবে ২০১৩ সাল থেকে দেশটির জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ক্লার্ক গেফোর্ডের সঙ্গে এক সাথে থাকছেন। ২০১৮ সালে তাদের ঘরে এক কন্যা সন্তানের আগম ঘটে। চার বছর বয়সি নেভ তে আরোহা আরডার্ন গেফোর্ড আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু করবে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে জাসিন্ডা
২০১৭ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে প্যাসিফিকের দেশ নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন জাসিন্ডা আরডার্ন। এখন পর্যন্ত তিনিই বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। এরপর ২০২০ সালে বিপুল ভোটে দ্বিতীয় মেয়াদে আবার প্র্রধানমন্ত্রী হন। তার আগে তিনি বিরোধী দলীয় নেতারও দায়িত্ব পালন করেন।
দুই মেয়াদে সাড়ে পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে জাসিন্ডাকে এক ঝাঁক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে করোনা মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা, হোয়াইট আইল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাৎ, আবাসন সমস্যা, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক সমস্যা অন্যমত।
পদত্যাগ নিয়ে জনশ্রুতি
২০২২ সালের শেষ থেকে জাসিন্ডার পদত্যাগ নিয়ে নানান কথা শোনা যাচ্ছিল। গত ডিসেম্বরে তা উড়িয়ে দেন স্বয়ং জাসিন্ডা।
এদিকে আগামী ১৪ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন। বিভিন্ন জরিপ ফল বলছে, আসন্ন নির্বাচনে জাসিন্ডার লেবার পার্টি হারার ক্ষীণ শঙ্কা রয়েছে। বোধ হয় এ কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু এমন কোনো আভাস জাসিন্ড বা লেবার পার্টির তরফে পাওয়া যায়নি।
প্রশংসায় ভাসছেন জাসিন্ডা
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাসিন্ডার পদত্যাগের ঘোষণায় তার ভক্তরা দুঃখ পেয়েছেন। কষ্ট পেয়েছেন তার অনেক সহকর্মী ও বন্ধু।
তবে তার সহকর্মীরা জাসিন্ডার প্রশংসা করতেও ভোলেননি। নিউজিল্যান্ডের ন্যাশনাল পার্টির নেতা ক্রিস্টোফার লুক্সন বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে জাসিন্ডার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এক জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ পদে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। নিউজিল্যান্ডকে বিশ্ব দরবারে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।’
প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ জাসিন্ডাকে বন্ধু সম্বোধন করে বলেন, ‘বুদ্ধি ও সামর্থ দিয়ে একটি দেশ কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, তা নিখঁতভাবে দেখিয়েছেন জাসিন্ড। তার মধ্যে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও দরদের কোনো কমতি ছিল না। ছিল গভীর দৃষ্টি।’
সূত্র: গার্ডিয়ান।