প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৮ পিএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:১০ পিএম
ভিডিও ফুটেজে নিহত কিনান অ্যান্ডারসনের ওপর টেইজার বন্দুক ব্যবহারের দৃশ্য।
যুক্তরাষ্ট্রে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিস কুলার্সের এক চাচাতো ভাই লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ কর্তৃক রাস্তায় আটক হওয়ার ঘণ্টাখানেক পর পুলিশি হেফাজতে মারা গেছেন।
পেশায় শিক্ষক ৩১ বছর বয়সি কিনান অ্যান্ডারসন সান্তা মনিকার একটি হাসপাতালে মারা যান বলে জানা গেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, কিনানের বিপরীতে পুলিশ বারবার টেইজার বন্দুক ব্যবহার করেছে এবং তাতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এলএপিডি) ৩ জানুয়ারির এনকাউন্টারের বডি ক্যামেরা ফুটেজ প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে কিনান সাহায্য চাচ্ছেন এবং পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে ধরে রেখেছেন।
একপর্যায়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘তারা আমাকে জর্জ ফ্লয়েড বানানোর চেষ্টা করছে!’ ২০২০ সালের মে মাসে মিনেসোটার মিনিয়াপোলিসে এক পুলিশ সদস্যের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড নিহত হন।
কিনান ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায় থাকতেন এবং কোনো কারণে লস অ্যাঞ্জেলেসে গিয়েছিলেন। কিনানের সঙ্গে পুলিশের অমানবিক আচরণের ফুটেজটি এলএপিডির ওপর চাপ বাড়িয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের হেফাজতে কিনানসহ তিনজনের মৃত্যু হলো। বাকি দুজন হলেন—টাকার স্মিথ ও অস্কার সানচেজ। এই দুজনই জানুয়ারির শুরুতে পুলিশ কর্মকর্তাদের গুলিতে নিহত হন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস এই ঘটনাকে ‘গভীর চিন্তার" বলে অভিহিত করেছেন। পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, তারা ওই তিনজনের মৃত্যুর তদন্ত করছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ প্রধান মিশেল মুর বুধবার (১১ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কিনান ট্রাফিক আইনে অপরাধ করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, কিনান ‘তাদের অনুমতি ছাড়াই অন্য ব্যক্তির গাড়িতে ওঠার’ চেষ্টা করে ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু, ফুটেজে দেখা যাচ্ছে কিনানকে চেপে ধরে রেখেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি যন্ত্রণায় ভুগছিলেন এবং ফার্স্ট অফিসারকে বলছিলেন, ‘কেউ আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে।’
প্রাথমিকভাবে কিনান পুলিশের নির্দেশ অনুসারে বসেছিলেন কিন্তু আরও পুলিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি উঠে যান এবং রাস্তায় দৌড় দেন। পুলিশ যখন তাকে আটক করার চেষ্টা করে তখন তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘দয়া করে সাহায্য করুন। তারা আমাকে জর্জ ফ্লয়েড বানানোর চেষ্টা করছে!’
টেইজার বন্দুকটি প্রথমে তার ওপর প্রায় ৩০ সেকেন্ডের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপর আরও পাঁচ সেকেন্ডের জন্য সেই বন্দুক ব্যবহার করা হয়। পুলিশ জানায়, এর পাঁচ মিনিট পর একটি অ্যাম্বুলেন্স আসে এবং তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টা পরে তিনি মারা যান।
কিনান অ্যান্ডারসনের মৃত্যুতে পুলিশ-ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি ফের সামনে এসেছে। দেশটির অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে টেইজার বন্দুক বহনকারী পুলিশকে ট্র্যাফিক দুর্ঘটনায় মোতায়েন করা উচিত নয়।
কিনান অ্যান্ডারসনের চাচাতো ভাই প্যাট্রিস কুলার্স গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘আমার চাচাতো ভাই সাহায্য চেয়েছিল এবং সে তা পায়নি। আমার চাচাতো ভাই তার প্রাণ হারানোর ভয় পেয়েছিলেন। তিনি গত ১০ বছর কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যাকে চ্যালেঞ্জ করে আন্দোলন করেছেন। তিনি জানতেন কী ঝুঁকিতে রয়েছে এবং তিনি নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। কেউ তাকে সাহায্য করেনি।’ প্যাট্রিস কুলার্সের স্ত্রী এই ঘটনায় এলএপিডি পুলিশ প্রধানের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
সূত্র : বিবিসি।