প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:১৮ পিএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৫৩ পিএম
বাজারের চেয়ে সস্তায় আটা কিনতে পাকিস্তানে সবাই প্রায় ভিড় জমাচ্ছে সরকারি দোকানে। ছবি : পিটিআই
বাড়িতে অভুক্ত পরিবার। সরকারি দোকানে কমদামে আটা কিনতে গিয়েছিলেন কর্তা। কিন্তু আটা ফুরিয়ে গেছে এমন গুজবে শুরু হয় গণ্ডগোল। তারই জেরে শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন লাশ হয়ে। ঘটনা পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মিরপুর খাসের। তীব্র অর্থনৈতিক সংকট জেঁকে বসেছে দেশটিতে। সেটিরই নতুন এক চিত্র যেন এটি।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার খবর বলছে, পাকিস্তানের বাজারে কয়েক হাজার রুপিতে বিক্রি হচ্ছে আটার বস্তা। দেশটিতে শহরভেদে ১৫ থেকে ২০ কেজি আটার বস্তার দাম এখন ২,০৫০ রুপি থেকে ৩,০০০ রুপি। সে কারণে সবাই প্রায় ভিড় জমাচ্ছে সরকারি দোকানে। কারণ সেখানে আটার বস্তা মিলছে ১২০০ রুপিতে।
শুধু আটা নয়, দেশটিতে দাম বেড়েছে মুরগি ও ভোজ্য তেলেরও। আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে এ দাম আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের দৈনিক দ্য ডনের খবরে জানা যায়, গত ২৭ ডিসেম্বর পামঅয়েল, সয়াবিন তেল এবং সূর্যমুখী তেলের মতো পণ্যগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকায় যুক্ত করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে উৎপাদনকারীদের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। ফলে ফুরিয়ে আসছে পামঅয়েল, সয়াবিন তেল ও সূর্যমুখী তেলের মজুদ।
পাকিস্তান বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব উমর ইসলাম খান জানান, পামঅয়েলের দাম প্রতি মণে ১৩ হাজার পাকিস্তানি রুপি থেকে বেড়ে ১৪ হাজার রুপিতে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ঘি এবং ভোজ্য তেলের দাম কেজি/লিটারপ্রতি বেড়েছে ২৬ রুপি করে।
এরই মধ্যে সংকট সামাল দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন উমর। তিনি আশঙ্কা করেছেন, সামনে বিশেষ করে রোজার সময় পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হবে।
আমদানির মাধ্যমে এ সমস্যা রাতারাতি নিরসনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ পাকিস্তানে বাইরের দেশ থেকে ভোজ্য তেল রপ্তানিতে ন্যূনতম ৬০ দিন সময় লাগে বলে উল্লেখ করেছে ডন।
তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির।
নভেম্বরে ক্ষমতা নেওয়ার পর এবারই প্রথম উপসাগরীয় রাজ্যটিতে সফরে গেছেন তিনি। প্রায় এক সপ্তাহের বৈদেশিক সফরে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতেও সফর করবেন।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআর বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সামরিক বাহিনীর প্রধান ভ্রাতৃপ্রতিম দুদেশের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন এবং পারস্পরিক স্বার্থ, সামরিক থেকে সামরিক সহায়তা এবং নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে জোর দেবেন।’
এমন একটি সময়ে জেনারেল মুনির বিদেশ সফর করছেন, যখন পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভ ৬০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদন বলছে, পাকিস্তানের এই তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভূমিকা রেখেছে গত বছরের মারাত্মক বন্যা। আনুমানিক তিন হাজার কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়েছে ওই বন্যায়।