প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:০৯ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:২৫ পিএম
প্রিন্স হ্যারি। ছবি: সংগৃহীত
২০ বছরের যুদ্ধে দুবার আফগানিস্তান সফর করেন ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি। ওই সময় তিনি অন্তত ২৫ জন আফগান নাগরিককে হত্যা করেন। এসব ভুক্তভোগীকে সদ্য প্রকাশিত নিজের আত্মজীবনীমূলক বইয়ে ‘দাবার গুঁটি’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। হ্যারির এ ধরনের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে তালেবান।
হ্যারির আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্পেয়ারের’ স্প্যানিশ অনুবাদ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এতে রাজপরিবারের নানান গল্প, মাদক গ্রহণ, নিজের কুমারীত্ব হারানোর বর্ণনা দিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সি হ্যারি।
বইটির একটি অংশে সাকেক্সের ডিউক হ্যারি লেখেন, এটা এমন কোনো পরিসংখ্যান নয়, যা নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি। তবে এটা নিয়ে অনুশোচনারও কিছু নেই। যুদ্ধক্ষেত্রে আমি যখন বিপদ ও বিভ্রান্তির মুখে পড়েছি, তখন আমি ওইসব ২৫ ব্যক্তিকে আর মানুষ ভাবতে পারিনি।’
‘তাদের আমার দাবার গুঁটি মনে হয়েছে। অতএব তাদের আমি বোর্ড থেকে সরিয়ে দিয়েছি। এসব খারাপ মানুষ যাতে ভালো মানুষকে হত্যা করতে না পারে, তাই তাদের হত্যা করা দরকার ছিল।’
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যারির আফগান নাগরিক হত্যা, সেই হত্যার বিবরণ যে ভাষায় তিনি বর্ণনা করেছেন, তার প্রতিবাদ জানিয়েছে তালেবান।
তালেবানের অন্যতম শীর্ষ নেতা আনাস হাক্কানি শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) এক টুইটে লেখেন, ‘মিস্টার হ্যারি, আপনি যাদের হত্যা করছেন, তারা তো দাবার গুঁটি ছিলেন না। তারা ছিলেন মানুষ। আপনি যা করছেন, তা যুদ্ধাপরাধ।’
‘তবে হ্যাঁ, আপনি যা বলেছেন, তাতে এক ধরনের সত্য আছে। আমদের নিষ্পাপ জনগণ আপনাদের সেনা, সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে দাবার গুঁটিই ছিলেন। দুর্ভাগ্য, শত আয়োজন সত্ত্বেও আপনারা সেই খেলায় হেরে গেছেন।’
তালেবানের পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র আবদুল কাহার বালকিও হ্যারির বর্ণনার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমাদের আফগান দখলদারি মানবজাতির ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। দখলদার সেনাদের হাতে আফগানদের যে মানসিক ক্ষত (ট্রমা) হয়েছে, হ্যারির বর্ণনায় নিপীড়নের সারবস্তু ধরা পড়েছে। তারা নিষ্পাপ আফগানদের নির্বিচারে হত্যা করেছে।’
প্রিন্স হ্যারি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ১০ বছর চাকরি করেন। এক সময় তিনি ক্যাপ্টেন হন। চাকরি জীবনে তিনি দুবার আফগানিস্তান সফর করেন। প্রথমবার ২০০৭-০৮ সালে ফরোওয়ার্ড এয়ার কন্ট্রোলার হিসেবে। দ্বিতীয়বার ২০১২-১৩ সালে যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে।
২০ বছর সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের পর ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট বিপর্যস্তভাবে আফগানিস্তান ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। তারা কাবুল ছাড়ার আগে দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান।
তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশটিতে একদিকে বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা। অন্যদিকে, নারীদের ওপর খড়গহস্ত বিস্তার শুরু করে তালেবান সরকার।
শুরুতেই বন্ধ করে দেওয়া হয় নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারি চাকরি থেকে নারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। স্কল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়। সর্বশেষ এনজিওতেও নারীদের নিষিদ্ধ করে তালেবান সরকার।