প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৪৫ পিএম
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৩২ পিএম
তুষারঝড়ে নিউইয়র্কের বাফেলো শহর সবেচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত। বাফেলোয় অন্তত ২৭ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।২৬ ডিসেম্বর বাফেলো থেকে তোলা। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় বছরের এই সময়ে তুষারঝড় বা বোম্ব সাইক্লোন স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব দিকের অধিকাংশ রাজ্য, প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকো সীমান্তে যে তুষারঝড় হচ্ছে, গত তিন দশকে তার নজির নেই। সপ্তাহখানেকের তুষারঝড়ে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিউইয়র্কের বাফেলো শহরে সবচেয়ে বেশি ২৭ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
ছয় দিন ধরে চলা ভয়ংকর বোম্ব সাইক্লোনে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ রাজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ২ কোটি মানুষ। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে কোনো কোনো রাজ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে। প্রতিবেশী কানাডাসহ যুক্তরাষ্ট্রে তুষারঝড়ে নানানভাবে আক্রান্ত হয়েছে আরও প্রায় ২৫ কোটি মানুষ।
চলমান বোম্ব সাইক্লোন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্য থেকে কানাডার কুইবেক পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মাইলজুড়ে বিস্তৃত। বিশেষ করে কানাডার পাশের গ্রেস লেক থেকে মেক্সিকো সীমান্তের রিও গ্র্যান্ডে যে ভয়াবহ তুষারঝড় হচ্ছে, তা স্থানীয় প্রবীণরা জীবদ্দশায় দেখেননি।
যুক্তরাষ্ট্রে বিপর্যস্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে মিনেসোটা, আইওয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক অন্যতম। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মন্টানার তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
কোনো কোনো স্থানে বাড়িঘরে ৮ ফুট বা প্রায় আড়াই মিটার পুরু বরফ জমেছে। মঙ্গলবারের মধ্যে তা অন্তত ১৪ থেকে ২৩ ইঞ্চি বাড়তে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। এ অবস্থায় নিউইয়র্কসহ কিছু স্থানে অনেকে দু-এক দিন ধরে গাড়িতে আটকা পড়ে আছেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার নিউইয়র্কের জন্য কেন্দ্রীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছেন। এক টুইটে বাইডেন লেখেন, ‘বড়দিনের ছুটির দিনে যারা প্রাণ হারিয়েছে, আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল সোমবার বলেন, ‘জনগণের প্রতি আমাদের অনুরোধ, দয়া করে আপনারা ঘরে অবস্থান করুন। রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তুষারঝড় আরও দু-এক দিন চলতে পারে। আমাদের শঙ্কা, নিউইয়র্কে বরফের পুরুত্ব আরও ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি বাড়তে পারে।’
নিউইয়র্কের এরি কাউন্টির নির্বাহী মার্ক পোলোনকার্জ বলেন, ‘১৯৭৭ সালের পর বাফেলো শহরে এমন তুষারঝড় আর হয়নি। তখন নিহত হয়েছিলেন প্রায় ৩০ জন। এবার ইতোমধ্যে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। আমাদের শঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’ বাফেলো এরি কাউন্টির একটি শহর।
দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে ছয় দিনে ১৫ হাজারের বেশি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এতে বড়দিনে যারা নিজ শহরে বা গ্রামে যেতে চেয়েছিলেন, তাদের অনেকে বেশ হতাশ। বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন অনেকে।
তুষারঝড়ে হিমশীতল হয়ে পড়া কানাডার অন্টারিও, ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়। এসব অঞ্চলে হাজার হাজার গাড়ি তুষারে ঢাকা পড়েছে। কানাডায় তুষারঝড়ে অনেক গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
কয়েক দিনের তুষারঝড়ে কানাডায় অন্তত পাঁচ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আর কিউবায় নিহত হয়েছেন তিনজন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় নিহত হয়েছেন আরও অন্তত পাঁচজন।