প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৪৭ পিএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৬ পিএম
অরুণাচল সীমান্তে ভারত-চীনের সেনাদের সংঘাত নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে ভারতে। ছবি : সংগৃহীত
ভারত ও চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুই প্রতিবেশী দেশ। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ বাস করে এই দুদেশে। উভয় দেশের রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। কিন্তু দুদেশের শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সামরিক সক্ষমতা ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুদেশের ব্যবধান অত্যন্ত স্পষ্ট, বঙ্গোপসাগরের মতো গভীর ও বিশাল। দুদেশের যৌথ সীমার পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার, যার অধিকাংশই অমীমাংসিত।
সীমান্ত ইস্যুতে ১৯৬২ সালে দুই দেশ একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ যুদ্ধ ভারত-চীনের পররাষ্ট্রনীতিকে চিরতরে বদলে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এরপর থেকে দুদেশের মধ্যে আর কোনো যুদ্ধ না হলেও কয়েক বছর পর পরই সীমান্তে সংঘাত হয়েছে। সর্বশেষ, গত ৯ ডিসেম্বর উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টর দুদেশের সেনারা হাতাহাতি ও লাঠালাঠিতে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে যাওয়ার আগেই দুদেশের সামরিক কর্মকর্তারা আলোচনা শুরু করেন। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত রয়েছে—এমনটাই দাবি করছেন চীন ও ভারতের কর্মকর্তারা।
এশিয়া টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, তাওয়াং সেক্টরের সংঘাতে দুদেশের অন্তত ৪০ সেনাসদস্য আহত হয়েছে। আর চীনা সেনারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) স্ট্যাটাস বদলে দিয়েছে। চীন এলএসি এলাকার প্রায় ৯০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা দখল করে নিয়েছে। অর্থাৎ এসব অঞ্চলে আগে উভয় পক্ষের সেনারা শান্তিপূর্ণভাবে নিয়মিত টহল দিতে পারলেও ভারতের সেনারা এখন সেই অধিকার হারাল।
তার আগে ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখ সীমান্তের গালওয়ান ভ্যালিতে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন ভারত-চীনের সেনারা। তখনও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু বড় রকমের লাঠালাঠি হয়। এতে ভারতের ২০ ও চীনের চার সেনা নিহত হন। আহত হন অনেকে।
এদিকে ভারতের বিরোধী দলগুলোর দাবি, সীমান্ত ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সমানে সমানে অবস্থান নিতে পারছে না বিজেপি সরকার। তাই তারা বাস্তব পরিস্থিতিকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছে।
স্ক্রলডটইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (২১ ডিসেম্বর) ভারতের পার্লামেন্টের সেন্টাল হল অব পার্লামেন্টে বৈঠক করেছেন কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটি। বৈঠকে কমিটির চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘তাওয়াং সেক্টরে যা হয়েছে, তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। এটা নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে হবে। আলোচনা না করাটা আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি অসম্মান। সবচেয়ে বড় কথা, আলোচনা করতে না চাওয়ায় প্রমাণিত হয়, সীমান্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জাতিকে এক করার সক্ষমতা হারিয়েছে বিজেপি। তাই তারা বিষয়টি নিয়ে সংসদে খোলামেলা আলোচনা করতে ভয় পায়।’
সোনিয়া গান্ধীর প্রশ্ন, আমাদের অব্যাহতভাবে আক্রমণের শক্তি চীন কোথা থেকে পায়? এসব চীনা আক্রমণ ঠেকাতে আমাদের প্রস্তুতি কী? এরকম পরিস্থিতিতে আমার করণীয় কী? আগামীতে চীন যাতে আর আনুপ্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য সরকারের নীতিই বা কী? চীন ও আমাদের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে। এ অবস্থায় চীনের সামরিক আগ্রাসনের জবাবে আমরা কেনইবা কোনো অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেব না?
বিজেপি সরকার যে চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে, তার কিছু কারণও বলেছেন সাবেক কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী। সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘সরকার সমাজের কিছু অংশকে টার্গেট করে এমন সব নীতি গ্রহণ করছে, যা সমাজকে বিভক্ত করছে। দেশে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। নানানভাবে বিরোধীদের হয়রানি করছে। তাদের কণ্ঠরোধ করছে। গণমাধ্যম ও সাংবিধানিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের যাবতীয় ইনস্টিটিউশন ধ্বংস করছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে রাজ্য, সর্বত্র এমনটি করছে সরকার। এ অবস্থায় বিদেশি হুমকি মোকাবিলা করার মতো সাহস বিজেপি সরকারের নেই।’
বিজেপির জবাব
বিরোধীদের অব্যাহত চাপ সত্ত্বেও ভারত-চীন সেনাদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ নিয়ে পার্লামেন্টে কোনো আলোচনা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্তের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা করার প্রথা নেই জানিয়ে কিরেন রিজিজু বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০০৫ সালে আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন চীন সীমান্ত নিয়ে আলোচনা করতে কংগ্রেস জোট সরকারকে আমি অনুরোধ করেছিলাম। তখন হাউসের কংগ্রেসের নেতা প্রণব মুখার্জি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আমাকে বলেছিলেন, চীন সীমান্তের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এটা নিয়ে সংসদে আলোচনা না করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে।’
কিন্তু কংগ্রেসের দাবি, ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময় করণীয় নির্ধারণ করতে সংসদে উন্মুক্ত আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু।