প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৫২ পিএম
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:২৬ পিএম
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি সন্ত্রাস দমন বিভাগের (সিটিডি) কার্যালয়ে জঙ্গিরা তিন দিন ধরে কিছু সেনাসদস্যকে জিম্মি করে রাখে। ২০ ডিসেম্বর সেখানে অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ শাখা। ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি সন্ত্রাস দমন বিভাগের (সিটিডি) কার্যালয় রবিবার নিয়ন্ত্রণ নেয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি) ও আরও কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা। নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সেখানে থাকা সেনাদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। সেনাদের মুক্তির বিনিময়ে নিজেদের নিরাপদে আফগানিস্তানে যাওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানায় তারা। সরকার কয়েক দফায় একটা সমঝোতায় পৌঁছার চেষ্টা করে। তবে তা ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় মঙ্গলবার কমান্ডো অভিযান শুরু করে পাকিস্তান।
খাইবার পাখতুনখাওয়ার বান্নু জেলার সিটিডির ওই কার্যালয়ে মঙ্গলবার সকালে অভিযান শুরু করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি)। বেলা আড়াইটার দিকে অপারেশেন শেষ হয়। এতে সেখানে থাকা সব জঙ্গি নিহত হয়। পাশাপাশি এসএসজির ১০ থেকে ১৫ সদস্য আহত ও দুজন নিহত হন। তার আগে জঙ্গিরা সিটিডির কার্যালয় দখলে নেওয়ার পরপরই এক সেনাসদস্য নিহত হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে আলজাজিরার প্রতিবেদনে।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদে বলেন, ‘আজ ২টা ৩০ মিনিটে অভিযান সম্পন্ন করে এসএসজি। সব জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছে। অভিযানে সব জঙ্গি নিহত হয়েছে। এই কেন্দ্রে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মোট ৩৩ জঙ্গি আটক ছিল।’
দ্য ডনসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বান্নু জেলার ওই সিটিডি কার্যালয়ে কতজন সেনাকে জঙ্গিরা জিম্মি করেছিল, তা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কার্যালয়ে মোট ছয়জন সেনা ছিলেন। ছয়জনের মধ্যে দুজন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর। আর দুজন সন্ত্রাস দমন বিভাগের সদস্য।
রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) বান্নু জেলার সিটিডির ওই কেন্দ্রে আটক জঙ্গিদের একজন দায়িত্ব পালন এক সেনার কাছ থেকে একটি বন্দুক ছিনিয়ে নেয়। দ্রুত আটক সতীর্থদের কযেকজনকে মুক্ত করে। এরপর বন্দুকের নলের মুখে দায়িত্ব পালনরত সব সেনাকে জিম্মি করে।
এদিকে রবিবারের ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মাথায় সিটিডি নিজেদের দখলে নেওয়ার কথা স্বীকার করে টিটিপি। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র একটি ভিডিও বার্তায় তাদের সদস্যসহ আটক অন্য জঙ্গিদের নিরাপদে আফগানিস্তানে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানায়।
এরপর সরকারের সঙ্গে টিটিপির যোগাযোগ শুরু হয়। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় মঙ্গলবার অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা
জিওনিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মধ্য-আগস্ট থেকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে অন্তত ১১৮টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অন্তত ২৬ পুলিশ সদস্য, ১২ জন অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ১৭ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন। আহত হন আরও অনেকে।
গত রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের লাক্কি মারওয়াত জেলায় এক সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত চার পুলিশ সদস্য নিহত হন। সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) একই প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে জঙ্গি হামলায় এক সেনা ও দুজন সাধারণ মানুষ নিহত হন। একই দিন প্রদেশেটির রাজধানী পেশওয়ারে পৃথক আরেক আত্মঘাতী হামলায় দেশটির গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা নিহত হন। এই দুই হামলায় অন্তত আরও ২০ জন আহত হন। উভয় হামলার দায় স্বীকার করে টিটিপি।
টিটিপির উত্থান
২০০৭ সালে টিটিপি আত্মপ্রকাশ করে। আফগানিস্তান সীমান্তের খাইবার পাখতুনখাওয়া নিয়ে একটি স্বাধীন দেশ গঠনের ঘোষণা দেয়। যেখানে নিজেদের মতো করে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করা হবে। ২০০৮ সালেই টিটিপিকে নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান সরকার।
২০০৯ সাল থেকে টিটিপির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এ পর্যন্ত তাদের অনেক সদস্যসহ শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হয়। কিন্তু চরম দমন সত্ত্বেও বিরতি দিয়ে দিয়ে মাথাচাড়া দিয়েছে গোষ্ঠীটি। পাকিস্তানের অভিযোগ, টিটিপির সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু ভারত বারবার তা অস্বীকার করেছে।
দীর্ঘ আলোচনা শেষে ২০২১ সালের নভেম্বর টিটিপির সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছায় পাকিস্তান সরকার। এতে টিটিপি জঙ্গি হামলার বন্ধ করতে সম্মত হয়। চুক্তির মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়।
গত কয়েক মাসে খাইবার পাখতুনখাওয়াসহ দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে ব্যাপক জঙ্গি হামলা শুরু করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এ অবস্থায় ২৬ নভেম্বর অস্ত্রবিরতি বাতিল ও সারা দেশে হামলার ঘোষণা দেয় টিটিপি।
পাকিস্তানের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
বান্নুর ঘটনা নিয়ে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র নেড প্রাইস। এদিন নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে নেড প্রাইস বলেন, ‘হ্যাঁ, পাকিস্তানের চলমান ঘটনা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সন্ত্রাসী মোকাবিলায় পাকিস্তানকে যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র।’