প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২২ ১২:২০ পিএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২২ ১২:২৪ পিএম
ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি। ছবি: বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছুরিকাঘাতের একদিন পর ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির ভেন্টিলেটর খুলে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি এখন কথা বলতে পারছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তার এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়েইলি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে অঙ্গরাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলীয় শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় হামলার শিকার হন এবং গুরুতর অবস্থায় ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২০ সেকেন্ডের মধ্যে রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার আঘাত করেছে হামলাকারী।
ঘটনার পর তার অবস্থা বর্ণনা করে অ্যান্ড্রু ওয়াইলি গণমাধ্যমকে বলেন, আঘাতের কারণে লেখক একটি চোখও হারাতে পারেন।
হামলার ঘটনায় পুলিশ হাদি মাতার (২৪) নামের এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সে নিউ জার্সির ফেয়ারভিউয়ের বাসিন্দা। একটি পাস কিনে সে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেছিল।
শনিবার তাকে রুশদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আদালতে তোলা হলে তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেদিন মঞ্চে অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পরই হাদি লাফিয়ে মঞ্চে উঠে পড়েন এবং রুশদির ওপর হামলা চালায়। এ সময় সে লেখকের মুখে, ঘাড়ে ও তলপেটে কমপক্ষে ১০ বার ছুরিকাঘাত করে। এতে লেখকের স্নায়ু কেটে যায়, যকৃতের ক্ষতি হয় এবং তার একটি চোখও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বলে জানায় লেখকের এজেন্ট ওয়াইলি।
রুশদির সর্বশেষ আপডেট না জানলেও বর্তমানে ভেন্টিলেটর খোলা হয়েছে এবং তিনি কথা বলতে পারছেন জেনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেক লেখক ও পণ্ডিতর্বগ।
শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট মাইকেল হিলও রুশদির ভেন্টিলেটর সরিয়ে নেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে এক টুইট বার্তা প্রকাশ করেন।
এদিকে মঞ্চে রুশদির পাশে থাকা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হেনরি রিজও মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তবে তার আঘাত গুরুতর নয়।
হুমকির মুখে নির্বাসিত লেখকদের আশ্রয় ও সহায়তা দেয়, এমন একটি অলাভজনক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হেনরি রিজ।
হামলার আগে অনুষ্ঠানে রুশদির বক্তব্য রাখার কথা ছিল। যেখানে নির্বাসিত লেখকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এক অনন্য আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে তা নিয়ে আলোচনার কথা ছিল।
আহমেদ সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালে মুম্বাইয়ে এক কাশ্মীরি মুসলিম পরিবারে, ভারত ভাগের ঠিক আগে আগে। ১৯৮১ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের ছকে ফেলে জাদু বাস্তবতার মিশেলে লেখা তার সেই উপন্যাস ম্যান বুকার পুরস্কার জিতে নেয়। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটি বিক্রি হয় দশ লাখ কপির বেশি।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভ আর সহিংসতার মধ্যে বহু দেশ বইটি নিষিদ্ধ করে, রুশদির জন্মস্থান ভারতের সরকারই প্রথম সেই সিদ্ধান্ত নেয়।
ভারতের একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও রুশদি নিজেকে একজন নিরীশ্বরবাদী হিসেবেই পরিচয় দেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতার একজন কট্টর সমর্থক তিনি।
প্রবা/এনএস