প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৪৫ পিএম
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:১৩ পিএম
ওড়িশা উপকূলের আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে অগ্নি-৫ এর নবম পরীক্ষা চালায় ভারত। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের নিজেদের তৈরি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘অগ্নি-৫’-এর আরেকটি সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। পারমাণবিক ওয়ারহেড বা বোমা বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রটি পাঁচ হাজার ৪০০ কিলোমিটারের বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। চীন সীমান্তবর্তী ভারতের কোনো স্থান থেকে এটি বেইজিংয়ে আঘাত হানতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানায়, ওড়িশা উপকূলের আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে আজ সন্ধ্যায় (বৃহস্পতিবার) একটি অগ্নি-৫ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এটি অগ্নি-৫- এর নবম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ। এ সিরিজের যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আগে পরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোর দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা বৃহস্পতিবারেরটির চেয়ে কম।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অগ্নি-৫-এর এ পরীক্ষার সূচি আগেই নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশে ভারত-চীনের সেনাদের ৯ সাম্প্রতিক লাঠালাঠির ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। অরুণাচলের ঘটনার আগেই এটির পরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এটি একটি নিয়মিত পরীক্ষা। ভারত অগ্নি-৫-এর প্রথম পরীক্ষা চালায় ২০১২ সালে।
বৃহস্পতিবার অগ্নি-৫-এর পরীক্ষা চালানোর পর তাৎক্ষণিকভাবে চীনের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ইতোপূর্বে চীন অভিযোগে করেছিল, অগ্নি-৫ এর পাল্লা নিয়ে তথ্য লুকাচ্ছে ভারত। এটি অন্তত আট হাজার কিলোমিটার দূরের বস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগ বলছে অগ্নি-৫ পরীক্ষার সঙ্গে অরুণাচলের সাম্প্রতিক ঘটনার সম্পর্ক নেই। কিন্তু গণমাধ্যমগুলোর সংবাদ পরিবেশনে বৃহস্পতিবারের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গে অরুণাচলে ভারত-চীনের সেনাদের সংঘাতের একটা পরোক্ষ সম্পর্ক আছে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার চীনকে তোয়াজ করে চলে না, জনমনে এমন একটি বার্তা দিতেই অগ্নি-৫- এর নবম পরীক্ষা চালানো হয়েছে, এমন একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায় এনডিটিভিসহ ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
অরুণাচল সীমান্তে ৯ ডিসেম্বর ভারত ও চীনের সেনারা লাঠালাঠিতে জড়িয়ে পড়েন। এটা নিয়ে বুধবার (১৪ ডিসম্বর) লোকসভায় বড় পরিসরে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) এমপিরা। কিন্তু বিজেপির স্পিকার ওম বিরলা সেই সুযোগ দেননি। এ অবস্থায় সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে বিরোধী এমপিরা বুধবার ওয়াকআউট করেন।
স্ক্রলডটইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অরুণাচলে চীন-ভারতের সংঘাত নিয়ে মন্তব্য করছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সামরিক সদর দপ্তর পেন্টাগন। পেন্টাগনের প্রেস সবিচ প্যাট্রিক রাইডার মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের বলেন, ‘অরুণাচলের তাওয়াং সেক্টরে ৯ ডিসেম্বর যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তার নিরসন চায় যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে ভারতকে পূর্ণ সহযোগিতা দেবে ওয়াশিংটন।’
২০২০ সালের জুনে লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারতের সেনাদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত হয়। এতে ভারতের অন্তত ২০ সেনা নিহত হয়। চীনের কত সেনা নিহত হয়, তা স্পষ্ট জানা যায়নি। তবে চীনা কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের মাত্র ৫ সেনা নিহত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দাবি, চীনের নিহত সেনার সংখ্যা অন্তত ৪৫।
এ সংঘের্ষর পর দুপক্ষের স্থানীয় কমান্ডাররা দফায় দফায় বৈঠক করেন। অনেকগুলো বৈঠকের পর পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে যেতে সম্মত হয় চীন। এরপর ৯ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত দুদেশের সীমান্ত পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত ছিল বলা যায়।