প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৩৬ এএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৫৯ এএম
‘সঠিক পরিস্থিতি’ তৈরি হলে তার দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এবং আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা জোলানি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কোরি মিলস সিরিয়া সফরে যান। দামেস্কে জোলানির সঙ্গে তার ৯০ মিনিটের বৈঠক হয়।
ব্লুমবার্গকে মিলস জানান, এ বৈঠকে সিরিয়ার ওপর থাকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিলের জন্য কী কী পদক্ষেপ দরকার, তা নিয়ে আলোচনা হয়। মিলস বলেন, জোলানিকে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আসাদের রেখে যাওয়া রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করতে হবে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে এবং হায়াত তাহরির আল-শাম নামের যোদ্ধাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জোলানিকে ইসরায়েলকে আশ্বস্তও করতে হবে।’ আসাদ ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ইসরায়েল নিয়মিতভাবে সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্বত্য এলাকা দখল করে সেখানে অবস্থান করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
জোলানির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এ ইসরায়েলি দখল এবং দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতি। দেশটির বেশিরভাগ মানুষ এখন দরিদ্রতায় দিন কাটাচ্ছে। যুদ্ধপরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রয়েছে। যদিও জোলানির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তার পরও নিষেধাজ্ঞা তুলতে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশ ও তুরস্কের মতো সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে আছে। তবে কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে। মার্চে রয়টার্স জানিয়েছিল, কাতারকে সিরিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, সৌদি আরব সিরিয়ার বিশ্বব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবে, যাতে প্রাথমিক পুনর্গঠনের জন্য অর্থ পাওয়া যায়। মিলস জানান, জোলানি তাকে একটি চিঠি দিয়েছেন যা ট্রাম্পের কাছে পৌঁছাবে। এ বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যের পাল্টে যাওয়া বাস্তবতার দিকটিও তুলে ধরেছে। জোলানি একসময় আল-কায়েদায় যোগ দিয়ে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়েছেন। সে সময় কোরি মিলস ছিলেন একজন সেনা স্নাইপার। ব্লুমবার্গকে মিলস বলেন, ‘আমি জোলানিকে বলেছি আমি একজন সৈনিক হিসেবে একজন সৈনিকের সঙ্গে কথা বলছি।’
জোলানির আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেওয়ার কথা বলা মানে হলো তিনি আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর পথেই হাঁটতে চান। তারা ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল। তবে ওইসব দেশ কখনও ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়নি। অথচ জোলানি নিজেই সিরিয়ার গোলান মালভূমি থেকে এসেছেন, যা ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল দখল করে নেয়। জোলানি এর আগে ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকার কথা বললেও এখন তিনি সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সিরিয়া। মঙ্গলবার সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা মিডলইস্ট আইকে বলেন, ‘আমরা দেখতে চাচ্ছি সিরিয়া আমেরিকান ও ইসরায়েলি নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলা করতে পারে কি না। যদি তারা অঞ্চলে একীভূত হতে চায়, তাহলে তাদের এগিয়ে আসতেই হবে।’
জোলানির সরকার এখন তুরস্কের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়েও আলোচনা করছে। এরই মধ্যে ইউরোপ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য সিরিয়ার প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং গোয়েন্দা সংস্থার ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের পদক্ষেপ না নিলে এসব সিদ্ধান্তের বাস্তবিক প্রভাব খুব কম হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।