কাশ্মিরে হামলা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৬ এএম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১২:০১ পিএম
ভারতশাসিত কাশ্মিরে বন্দুকধারীদের হামলার পর জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠক ডেকেছে পাকিস্তান। মূলত ভারতের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতেই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ এ বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা থাকবেন বলে জানা যাচ্ছে। কাশ্মিরের এ হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন এবং এ ঘটনায় পাকিস্তানের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে ভারত। এ ছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে দেশটি। এতে দুই দেশের সম্পর্কে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারতের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতে পাকিস্তান তাদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, এ বৈঠকে সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন এবং সাধারণত কেবল বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বা বহিরাগত হুমকির সময় এ ধরনের বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকটি হবে বৃহস্পতিবার।
এর আগে হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে বুধবার বেশ কিছু কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভারত পাকিস্তানকে ‘সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদে’ সহায়তার অভিযোগ এনে পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় দেশের মধ্যকার প্রধান স্থল সীমান্তও বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের কিছু ভিসা বাতিল ও দুই দিনের মধ্যে তাদের ভারত ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মিরের পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে, যা হিমালয়ের মনোরম একটি এলাকায়, হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়। এ হামলায় ২৬ জন নিহত হন। যাদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই ভারতীয় নাগরিক। ওই একজন নেপালের নাগরিক। গত ২৫ বছরে কাশ্মিরে এটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ বেসামরিক হত্যাকাণ্ড।
ভারতের পুলিশ দাবি করেছে, এ হামলার পেছনে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের হাত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। যদিও ‘কাশ্মির রেজিস্ট্যান্স’ নামে একটি অজ্ঞাত গোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে।
তারা দাবি করেছে, কাশ্মিরে প্রায় ৮৫ হাজার ‘বহিরাগত’ বসতি স্থাপন করেছে এবং নিহতরা ‘সাধারণ পর্যটক নয়, বরং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট’। তবে এ দাবির স্বতন্ত্র কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে পাকিস্তান এ হামলাকে ভারতের ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ অপারেশন বলে আখ্যা দিয়েছে। অর্থাৎ তারা দাবি করছে, ভারত নিজেরাই এ হামলা সাজিয়েছে যেন পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানো যায়। পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, ভারতের কূটনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর ‘প্রত্যুত্তরমূলক জবাব’ দেওয়া হবে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও এ হামলাকে ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘এ সম্ভাবনা কখনোই পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না।’
উল্লেখ্য, কাশ্মিরের ভারতশাসিত অঞ্চলে ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছে। বহু কাশ্মিরি মুসলিম বিদ্রোহীদের সমর্থন করেন এবং তারা চান অঞ্চলটি হয় পাকিস্তানে যোগ দিক অথবা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক।
ভারত দাবি করে থাকে, এটি পাকিস্তান-প্রভাবিত ‘সন্ত্রাসবাদ’। অন্যদিকে পাকিস্তান বলে, এটি একটি বৈধ স্বাধীনতাকামী আন্দোলন। দীর্ঘ সংঘাতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, বিদ্রোহী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন।