প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৪২ এএম
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৪৯ এএম
বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অগ্রগতি যেন দুরন্ত ষাঁড়ের মতোই। যুক্তরাষ্ট্রের স্রাম্পতিক আগ্রাসী শুল্কনীতি বিরুদ্ধে শুরু হওয়া লড়াইকে যেন মূর্ত করে তুলেছে। ছবি : এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি মাসের দুই তারিখে বিশ্বের প্রায় দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। সেদিনই সেই শুল্কের কিছু অংশ কার্যকর হয়ে যায় ট্রাম্পের শুল্ক। বাকি অংশ কার্যকর হয়েছে ৯ এপ্রিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ পুরোদমে শুরু হয়ে গেল। ট্রাম্পের শুল্প অস্ত্রের জবাবে কোনো কোনো দেশ পাল্টা অস্ত্র দাগা শুরু করে।
গত মঙ্গলবার রাতেই জানা যায়, চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্কে খেপে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন। ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক আরোপের জবাবে চীন মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা আগে ছিল ৩৪ শতাংশ। ১০ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্ককে নিপীড়নমূলক আখ্যা দিয়ে তারা এই শুল্ক আরোপ করেছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার (৯ এপ্রিল) এশিয়ার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতে হতেই বড় ধরনের রদবদল হয়। শুরু হয় পতন। এরপর ইউরোপের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পরপরই সূচকের পতন হয়।
আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবা, খনি ও তেল ও গ্যাস খাতের সূচকগুলো ব্যাপক হারে পড়ে গেছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, খনি, তেল ও গ্যাস খাতের শেয়ারের দাম যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।
সেই সঙ্গে দাম কমেছে জ্বালানি তেলের। চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম নেমে এসেছে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। দর কমেছে ডলারের। সব মিলিয়ে মন্দার আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতের এনডিটিভির সংবাদে নতুন কিছু খাতে শুল্ক আরোপের তথ্য দেওয়া হয়েছে। ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের আওতার বাইরে কিছু খাত রয়ে গেছে, যেমন ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর। তবে তারাও বেশি দিন আওতার বাইরে থাকতে পারবে না। সংবাদে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শিগগিরই ওষুধ খাতে বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করতে পারেন। সেই শুল্কবানে রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত হতে পারে ভারতের ওষুধ শিল্প। এরই মধ্যে তার একটা ইঙ্গিতও দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত মঙ্গলবার ন্যাশনাল রিপাবলিকান কংগ্রেশনাল কমিটির সভায় ট্রাম্প বলেন, এমনভাবে ওষুধ শিল্পে শুল্ক আরোপ করা হবে যে কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে।
ভারতের ওষুধ রপ্তানির মূল বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত যত ওষুধ রপ্তানি করেছে, তার ৩১ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে; অর্থের পরিমাণের দিক থেকে যা ৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৮৭০ কোটি ডলার।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘটনায় শুরু থেকেই যুদ্ধংদেহী ছিল চীন। ২ এপ্রিলের পর চীনও মার্কিন পণ্যে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে। এরপর ট্রাম্প আরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন চীনের পণ্যে। সব মিলিয়ে চীনের পণ্যে অতিরিক্ত ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে চীন জানিয়েছে, এই দ্বন্দ্ব সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক। যদিও তারা একই সঙ্গে বলেছে, এই বাণিজ্য ঘাটতি অনিবার্য ও কাঠামোগত বিষয়। ট্রাম্প চীনকে এ রকম আঘাত করতে থাকলেও বা পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করতে চাইলে তারাও প্রস্তুত। সে কারণে তারাও আবার ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
বুধবার চীন বাণিজ্য বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বলেছে, চীন সব সময়ই চেষ্টা করেছে মার্কিন-চীন বাণিজ্য যেন সব সময় উভয়ের জন্য লাভজনক হয়। শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পাল্টা শুল্কে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইউরোপ প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটছে। গতকাল বুধবার ইউরোপের নেতারা ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের জবাবে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ইউরোপের ব্যবসা-বাণিজ্য সমন্বয় করে ইউরোপীয় কমিশন। তারা বিভিন্ন ধরনের মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে, যেমন মোটরসাইকেল, মুরগি, ফলমূল, কাঠ, পোশাক ও ডেন্টাল ফ্লস। এ-সংক্রান্ত একটি নথি রয়টার্সের হাতে এসেছে।
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের যে প্রভাব ইউরো অঞ্চলে পড়বে বলে আগে হিসাব করা হয়েছিল, এখন তারা মনে করছে, প্রভাব তার চেয়ে বেশি হবে। বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত চারটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থায়ন সচল রেখে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা হবে বলে জানিয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এই যখন পরিস্থিতি, তখনও কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্ভার। মঙ্গলবার তিনি বলেছিলেন, সমস্যা সারাতে ওষুধ দিতে হয়। তিনি সেই ওষুধ দিয়েছেন। এরপর কিছু ওলটপালট হবে, এটাই স্বাভাবিক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট বা সরকারপ্রধানরা যেভাবে তাকে ফোন করছেন, তাতে ট্রাম্প বেশ খুশি, বিষয়টি তিনি উপভোগ করছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বনেতারা এখন আমাকে ‘স্যার’ ‘স্যার’ করছেন। তাঁরা আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে মরিয়া।’ স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এসব দেশের নেতারা আমাদের ফোন করছেন। আমার পশ্চাদ্দেশে চুমু খাচ্ছেন। চুক্তি করার জন্য তাঁরা মরিয়া হয়ে পড়েছেন।’