× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জলবায়ু পরিবর্তন

অস্বাভাবিক হারে গলছে হিমবাহ

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৫ ১১:১৬ এএম

বিশ্বের হিমবাহগুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে গলে যাচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের হিমবাহগুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে গলে যাচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের হিমবাহগুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে গলে যাচ্ছে। গত তিন বছরে রেকর্ড পরিমাণে হিমবাহ গলতে দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। জেনেভায় জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটির বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড গ্লেসিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের পরিচালক মাইকেল জেম্প বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বিশ্বের হিমবাহগুলো থেকে ৯ হাজার গিগাটন পরিমাণ বরফ গলেছে। এ পরিমাণ বরফকে একসঙ্গে করলে জার্মানির আয়তনের সমান এবং ২৫ মিটার পুরুত্বের একটি বরফখণ্ড তৈরি করবে।

আর্কটিক থেকে আল্পস, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে তিব্বতীয় মালভূমি পর্যন্ত নাটকীয়ভাবে বরফ গলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলার পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে এবং নির্ভরযোগ্য পানির উৎস কমে গিয়ে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক সমস্যা দেখা দেবে। বিশ্বের প্রথম হিমবাহ দিবস উপলক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ইউনেসকো। এতে বিশ্বজুড়ে হিমবাহগুলোর সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। জেম্প বলেছেন, গত ছয় বছরের মধ্যে পাঁচ বছরই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে হিমবাহ গলার ঘটনা ঘটেছে। শুধু ২০২৪ সালেই হিমবাহের ভর ৪৫০ গিগাটন কমেছে।

পার্বত্য হিমবাহগুলো দ্রুত গলার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এতে লাখ লাখ মানুষ ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকিতে পড়ছে। পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ১১০ কোটি মানুষের ওপর হিমবাহ গলার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে। গত বুধবার প্যারিসে ইউনেসকোর সদর দপ্তরের বাইরে রয়টার্সকে হিমবাহ বিশেষজ্ঞ এইদি সেভেস্ত্রে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে আমরা যে পরিবর্তন দেখেছি তা আক্ষরিক অর্থে হৃদয়বিদারক। নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে এসব ঘটনা আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক দ্রুত ঘটছে।’ সেভেস্ত্রে উগান্ডার রোয়েনজোরি মাউন্টেনস এলাকা এবং পূর্ব আফ্রিকার ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক কঙ্গোতে তার সাম্প্রতিক সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব অঞ্চলে ২০৩০ সাল নাগাদ হিমবাহগুলো নাই হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধির ফলে গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ অস্বাভাবিক হারে গলে যাচ্ছে। ২০ বছরের তুলনায় পাঁচগুণ গতিতে গলছে এ বরফ। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, হাজার বছর জমাট বেঁধে থাকা এ হিমবাহ গলে যাওয়ায় সাগরের পানিও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ গলে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের আশঙ্কা, এ হিমবাহ পুরোপুরি গলে গেলে সুমদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত ২০ ফুট বেড়ে যাবে। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অ্যান্ডারস অ্যাঙ্কার বজর্ক রয়টার্সকে বলেন, গ্রিনল্যান্ডের ১ হাজার হিমবাহের সমীক্ষায় দেখা গেছে, দুই দশকে বরফ গলনের হার একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। হিমবাহগুলোতে প্রতি বছর গড়ে ২৫ মিটার করে বরফ গলে যাচ্ছে। মাত্র দুই দশক আগেও যা ৫-৬ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হিমবাহের ওপর গবেষণা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। হিমবাহগুলোর উপগ্রহ চিত্র এবং ২ লাখ পুরোনো ছবি বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে এ গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়। গত এক দশকে হিমালয়ের হিমবাহ গলার পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। আগের দশকের চেয়ে ২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত হিমবাহ গলেছে ৬৫%-এর বেশি দ্রুত। এভাবে গলতে থাকলে চলতি শতকের মধ্যে হিমবাহগুলোর ৮০% উধাও হয়ে যাবে। এর ফলে ২০০ কোটি মানুষের পানির উৎস সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। কাঠমান্ডুভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনটিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্টের (আইসিআইএমওডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের (এইচকেএইচ) হিমবাহগুলো আশপাশের পাহাড়ি এলাকার ২৪ কোটি মানুষের পানির উৎস। এ ছাড়া নিচের দিকে নদী উপত্যকার আরও ১৬৫ কোটি মানুষ হিমালয়ের পানির ওপর নির্ভরশীল।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি মেনে যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বাড়ে, তাহলে হিমবাহের অর্ধেক ২১০০ সালের মধ্যে গলে নিঃশেষ হবে। আর যদি বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পযুগের আগের অভীষ্ট দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে, এরপরও ৩৬% হিমবাহ উধাও হবে। ইউনেসকোর নতুন প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, হিমবাহ গলার কারণে পূর্ব আফ্রিকায় পানিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংঘাত বেড়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এসব ঘটনার প্রভাব সামান্য হলেও বিশ্বজুড়ে হিমবাহ গলে যাওয়ার এ প্রবণতা ক্রমেই জটিল প্রভাব ফেলছে। ২০০০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পার্বত্য হিমবাহ গলার কারণে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৮ মিলিমিটার বেড়েছে। অর্থাৎ বছরে প্রায় ১ মিলিমিটার করে বেড়েছে। ওয়ার্ল্ড গ্লেসিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের তথ্য বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিলিমিটার বাড়লে তিন লাখ মানুষ বার্ষিক বন্যার ঝুঁকিতে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে পৃথিবীব্যাপী পরিবেশ রক্ষায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইউরোপজুড়ে অনেক খাল ও হ্রদ শুকিয়ে গেছে। কৃষির অনুকূল জলবায়ু না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল উৎপাদনও। এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা ভয়ংকর আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে বারবার সতর্ক করছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা