× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইরানের নৈতিকতা পুলিশ বিলুপ্তের ইঙ্গিত

প্রবা ডেস্ক

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৫২ পিএম

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৫৬ পিএম

আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে হিজাববিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ইরান। ছবি: সংগৃহীত

আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে হিজাববিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ইরান। ছবি: সংগৃহীত

ইরান অবশেষে নৈতিকতা পুলিশের ‘বিলুপ্ত’ ঘোষণা করতে যাচ্ছে। আড়াই মাসের বেশি সময় হিজাববিরোধী আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শনিবার দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মোন্তাজেরি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (৩ ডিসেম্বর) ইরানের কওম শহরের একটি অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন মোহাম্মদ জাফর মোন্তাজেরি। এ সময় তিনি বলেন, বিচার বিভাগের সঙ্গে নৈতিকতা পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কর্তৃপক্ষ এটি শুরু করেছিল, তারাই এটির বন্ধ ঘোষণা করেছে।’ এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ জাফর মোন্তাজেরি এ মন্তব্য করেন। 

নৈতিকতা পুলিশ বাতিল করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে ইরান সরকারের আর কোনো কর্তৃপক্ষ বা শীর্ষ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। তা ছাড়া নৈতিকতা পুলিশ টহল বন্ধ করা হয়েছে কি না, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

অন্যদিকে বাহিনীটি চিরতরে বাতিল করা হয়েছে, মোহাম্মদ জাফর মোন্তাজেরি এমন কোনো কথা বলেননি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে আলজাজিরার প্রতিবেদনে। 

সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদ জাফর মোন্তাজেরি শনিবার বৈঠকে বলেন, ‘নৈতিকতা পুলিশ মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করছে, তার পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে বিচার বিভাগ।’ এর অর্থ হিজাব বিষয়ক বিধি-বিধান এখনও বাতিল করা হয়নি। তবে নৈতিকতা পুলিশের টহল স্থগিত করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। 

তবে বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম নৈতিকতা পুলিশ বাতিল করা হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে। 

সাবেক ইরানি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদি নেজাদ গাশত-ই এরশাদ বা নৈতিকতা পুলিশ প্রতিষ্ঠা করেন। শালীনতা বজায় ও হিজাব পরার বিস্তার ছড়িয়ে দিতে এ বাহিনী গঠন করা হয়। ২০০৬ সাল থেকে এটির কার্যক্রম শুরু করে। গাশত-ই এরশাদ বাহিনীর পুরুষ সদস্যরা সবুজ পোশাক পরে। আর নারী সদস্যরা কালো হিজাবে মাথা ঢেকে রাস্তায় টহল দেয়। 

এদিকে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মোন্তাজেরি বলেন, ‘আইনসভা ও বিচার বিভাগ (হিজাব ইস্যুতে) যৌথভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ৩০ নভেম্বর আইনসভার সাংস্কৃতিক কমিশনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। দু-এক সপ্তাহের মধ্যে একটি চূড়ান্ত ফল আসতে পারে।’

একই দিন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও একই ধরনের ইঙ্গিত দেন। ইরানের তুলানমূলক উদার রাজনৈতিক দল দ্য ইউনিয়ন অব ইসলামিক ইরান পিপল পার্টির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ খাতামি একই দিন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বাধ্যতামূলক হিজাব বাতিলের জন্য আইনগত প্রস্তুতি শুরু করুন।’

মাহসা আমিনি নামের এক কুর্দি তরুণী গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে দেশটির নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। যথাযথভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রেপ্তারের তিন দিন পর মাহসা আমিনিকে মৃত ঘোষণা করে পুলিশ। 

পরের দিন ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে তেহরান, ইস্পাহানসহ ইরানের উল্লেখযোগ্য সব শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। দ্রুত তা সবকটি তথা ৩১ প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সমাজের নানান গ্রুপ ও শ্রেণির মধ্যে। তরুণীরা রাস্তায় হিজাব খুলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। মাথার চুল কেটে প্রতিবাদ জানান।  

শুরুর দিকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণীরাই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তরুণী ও নারীদের পাশাপাশি তরুণ ও বিভিন্ন বয়সের পুরুষও আন্দোলনে যোগ দেন। যোগ দেন ব্যবসায়ী, কলকারখানার কর্মচারী ও শ্রমিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ফুটবলারসহ নানান পর্যায়ের তারকারা। সম্প্রতি বোরকা পরা নারীরাও হিজাব আন্দোলনের পক্ষে রাস্তায় নামেন। 

শুরু থেকেই কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে সরকার। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভে ২০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে শনিবার জানিয়েছে ইরানের স্টেট সিকিউরিটি কাউন্সিল। কিন্তু তার আগে বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্যসহ ৩০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ডসের প্রধান আমিরালি হাজিজাদেহ। 

অন্যদিকে, অসলোভিত্তিক ইরান বিষয়ক এনজিও ইরান হিউম্যান রাইটস মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিক্ষোভে ৪৪৬ সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য মতে, একই সময়ে আটক হয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার। 

বিক্ষোভকারীদের নিপীড়নের অভিযোগে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তা ছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইরান সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে নিন্দা করে একটি প্রস্তাব পাস করে। 

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর ১৯৮৩ সালে জনসম্মুখে হিজাব বা স্কার্ফ বাধ্যতামূলক করে ইরান। তখনই সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ হয়। গত বছর ক্ষমতা গ্রহণের পর হিজাব আইন আরও কঠোর করেন রাইসি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা