প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৫১ পিএম
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৪২ পিএম
২০২১ সালের ১৬ জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সর্বশেষ বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নয় মাস পার হয়ে গেছে। শীত পড়তে শুরু করেছে ইউরোপে। জ্বালানি সংকটে দিশাহারা মহাদেশটি। সারা বিশ্বে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি। খাদ্যসংকটে ধুঁকছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। এমন একটি পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। বৈঠক শেষে বাইডেন ও মাখোঁ যৌথ বিবৃতি দেন। এতে রুশসেনারা ইউক্রেন ত্যাগ করলে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বাইডেন।
পরবর্তীতে বাইডেন ও মাখোঁ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে বাইডেনকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে বাইডেন বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি মিস্টার পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। এটা কেবল তখনই সম্ভব, যদি তার (পুতিন) মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার কোনো আগ্রহ থাকে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই ধরনের কোনো মানসিকতা তিনি দেখাননি। এ যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র যৌক্তিক পথ হলো, রুশসেনাদের ইউক্রেন ত্যাগ করা।’
সংবাদ সম্মেলনে মাখোঁ বলেন, ‘আমি পুতিনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখব। যুদ্ধের উত্তেজনা যেন না বাড়ে সেই চেষ্টা করব। চেষ্টা করব (যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে) সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে।’
তবে যৌথ বিবৃতিতে বাইডেন ও মাখোঁ এই বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে যে নৃশংসতা চালিয়েছে, যে যুদ্ধাপরাধ করেছে, তার বিচার হবে। রাশিয়াকে এ জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে সবকিছু করবে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স।
বাইডেনের মন্তব্যের একদিন পর শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মস্কো। রাশিয়া টুড (আরটি) জানায়, রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শান্তি আলোচনার জন্য কোনো ধরনের পূর্বশর্ত গ্রহণযোগ্য নয় জানিয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন অতীতে সমসময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। বর্তমানেও আছেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন। আমাদের স্বার্থ রক্ষার পছন্দের পথ শান্তিপূর্ণ কূটনীতি।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাধার কারণেই শান্তি আলোচনা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে পেসকভ বলেন, ‘শান্তি আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে এখনও পর্যন্ত তেমন একটা আগ্রহী মনে হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র এখনও রাশিয়ার নতুন অঞ্চলগুলোর স্বীকৃতি দেয়নি। আলোচনার জন্য এই স্বীকৃতি অপরিহার্য।’
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বদিকের চারটি অঞ্চলে গণভোট দেয় মস্কো মনোনীত স্থানীয় প্রশাসন। গণভোটে দনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার অধিকাংশ জনগণ রাশিয়ার অংশ হওয়ার পক্ষে ভোট দেন। এরপর ওই অঞ্চল চারটি চিরতরে রাশিয়ার অংশ হয়ে গেছে বলে একাধিকবার মন্তব্য করেন পুতিনসহ শীর্ষ রুশ কর্মকর্তারা।
শুক্রবার পুতিন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গেও ফোনালাপ করেন। আলোচনা শেষে ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, পুতিন শলৎজকে বলেছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের অবস্থান ধ্বংসাত্মক। আমি আশা করব, ইউক্রেন ইস্যুতে অবস্থান বদলাবে বার্লিন।
আর জার্মান চ্যান্সেলরের কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামোয় রুশ হামলার সমালোচনা করেন শলৎজ। কূটনীতির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানের পাশাপাশি ইউক্রেন থেকে রুশসেনা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানান জার্মান চ্যান্সেলর।
হামলা অব্যাহত
ইউক্রেনের খেরসন, দনেৎস্ক ও জাপোরিজিয়া অঞ্চলে শুক্রবারও রাশিয়া গোলা হামলা চালিয়েছে। রুশ হামলায় খেরসনে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় অন্তত তিনজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। খেরসনের ইউক্রেনের গভর্নর ইয়ারোস্লাভ ইয়ানুশেভিচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামের এক বার্তায় এসব তথ্য জানিয়েছে। রয়টার্স এসব তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি।
হতাহত
নয় মাসের যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কত সেনা ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন, তা কোনো পক্ষই প্রকাশ করতে চায় না। বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বলেছেন, ‘যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের ১০ থেকে ১৩ হাজার সেনা নিহত হয়েছেন।’ তবে জুনে দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ সেনা নিহত হচ্ছেন বলে জানিয়েছিল ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) এক ভিডিও বার্তায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন দিয়ালিয়েন যুদ্ধে ইউক্রেনের একলাখ সেনা নিহত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সেনাকর্মকর্তা মার্ক মিলি যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রায় এক লাখ করে সেনা নিহত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন।