প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৪৬ পিএম
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:০৩ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে বিদায়ী ভাষণ দেন। ছবি: সংগৃহীত
জাতির উদ্দেশে বিদায়ী
ভাষণ দিয়েছেন ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) হোয়াইট হাউসের
ওভাল অফিস থেকে এই ভাষণ দেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রে
‘বিপজ্জনক’ ধনিক
শ্রেণির উত্থান হচ্ছে বলে তার বিদায়ী ভাষণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সতর্ক
করে বলেন, ‘এই প্রভাবশালী গোষ্ঠী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে
দুর্বল করছে এবং সমাজে অসমতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। ভাষণে
তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীন বিকাশমান একটি ‘বিপজ্জনক’ অলিগার্কির
(গোষ্ঠীতন্ত্র) বিরুদ্ধে প্রহরীর ভূমিকা নিতে আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।’
আগামী ২০ জানুয়ারি রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। আর মেয়াদ শেষে বিদায় নেবেন ডেমোক্রেটিক পার্টির বাইডেন। ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার দিন কয়েক আগে বাইডেন তাঁর বিদায়ী ভাষণ দিলেন।
ভাষণে ৮২ বছর বয়সী বাইডেন বলেন, ‘আজ আমেরিকায় চরম সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রভাবের একটি অলিগার্কি বিকশিত হচ্ছে, যা আক্ষরিক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এটি খুব অল্পসংখ্যক অতিধনী লোকের হাতে ক্ষমতার বিপজ্জনক কেন্দ্রীকরণ।’
অতিধনীকদের নিয়ন্ত্রণের
মধ্যে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাইডেন।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট
একটি অতিধনিক ‘প্রযুক্তিশিল্প কমপ্লেক্স’ সম্পর্কেও আমেরিকানদের সতর্ক করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন,
‘এটি নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। দেশের
জন্য সত্যিকারের বিপদ ডেকে আনতে পারে।’
বাইডেন তার ভাষণে সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যম ফ্ল্যাটফর্মগুলোকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকানরা ভুল তথ্য ও অপতথ্যের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। যা ক্ষমতার
অপব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফ্ল্যাটফর্মগুলোর জবাবদিহির আহ্বান
জানান তিনি।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়
(এআই) বিপুল সম্ভাবনা দেখলেও এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘এআই বিপুল সম্ভাবনা উপহার দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রহরা না থাকলে
তা নতুন হুমকির জন্ম দিতে পারে।’
রূপান্তরমূলক প্রযুক্তিতে
যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই চীনের ওপর নেতৃত্ব নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন বাইডেন।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তার অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলেছে প্রভাবশালী শক্তি। ক্ষমতা ও মুনাফার স্বার্থে তারা এই কাজ করছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা নৃশংস সহিংসতার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল
ও হামাস। এ প্রসঙ্গও বাইডেনের ভাষণে উঠে এসেছে। বাইডেন দাবি করেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে
তিনি গত বছরের মে মাসে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এখন যে চুক্তিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে,
তা তার প্রস্তাবিত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই করা।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট
বলেন, ‘তিনি তার প্রশাসনের সাফল্যের জন্য গর্বিত। তারা
একত্রে যা করেছেন, তার সম্পূর্ণ প্রভাব অনুভব করতে সময় লাগবে। কিন্তু বীজ রোপণ করা
হয়েছে। সেগুলো বেড়ে উঠবে, দশকের পর দশক ধরে প্রস্ফুটিত হবে।’
আশাবাদী বক্তব্যের মধ্য
দিয়ে বাইডেন তার ভাষণ শেষ করেন। তিনি আমেরিকানদের দেশ সম্পর্কে তার আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি
এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন, এখন দেশের
জনগণের প্রহরীর ভূমিকা পালন করার পালা।
এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বাইডেন। গত ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বাইডেন লড়তে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন।