প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:৩২ এএম
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:৫০ এএম
ছবি : সংগৃহীত
গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে হামাস। গাজায় সরকার পরিচালনা করা ফিলিস্তিনের এই প্রতিরোধ সংগঠনটি কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের একথা জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সাথে হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যে গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরে হামাসের এই সম্মতির মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরিসমাপ্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর এই খবর প্রচার হওয়ার পর হাসি ফুটেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীর মুখে। খান ইউনিসসহ একাধিক শহরে রাস্তায় নেমে আসেন মানুষ। তারা অনেকেই ভিড় করেন টিভির সামনে। অনেকে স্বস্তি ও উল্লাস প্রকাশ করেন।
ওদিকে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের রাস্তায় নেমে আসেন হামাসের হাতে জিম্মিদের স্বজনরা। তারা হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি ধারণ করেন। তারা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, দ্রুতই যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর ও তার কার্যকর হবে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের দ্বারা প্রস্তাবিত ইসরায়েলের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
এর আগে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল যে, হামাসের সম্মতি পাওয়ার পরই চুক্তিটি বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে এবং রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে এটি কার্যকর হবে।
সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববারই প্রথম দফায় বন্দিদের মুক্তির মাধ্যমে চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার কথা।
আলোচনা সম্পর্কে অবহিত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও হামাস একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের মুক্তি দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পও গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের জন্য একটি চুক্তি হয়েছে। তাদের শিগগিরই মুক্তি দেয়া হবে। ধন্যবাদ!
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাপন্থি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, হামাস নিশ্চিত করেছে যে তারা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
ফিলিস্তিনি সংগঠনটি আল-জাজিরা আরবিকে জানিয়েছে, খলিল আল-হাইয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির বিষয়ে হামাসের অনুমোদনপত্র হস্তান্তর করেছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনও কোনো ঘোষণা আসেনি।
এর আগে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতার আশা প্রকাশ করে যে, শিগগিরই একটি চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে। আলোচনায় সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারাও একই কথা বলেন। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানায়, ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
এর আগে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল যে, হামাস গাজার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে এবং শিগগিরই চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
এই সংবাদটি এমন এক সময়ে এলো, যখন গাজা অঞ্চলে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সে সঙ্গে সেখানে মানবিক সংকট আরো তীব্র হচ্ছে।
উপত্যকাটিতে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে গত ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
প্রসঙ্গত, কাতার এবং অন্যান্য দেশের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি এর আগে বেশ কয়েকবার দেওয়া হলেও ইসরায়েল বার বারই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল। এর ফলে হামাস-ইসরায়েল শান্তি আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছিল।