লস অ্যাঞ্জেলেস
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:২০ এএম
ছবি : সংগৃহীত
ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস। দাবানল এত ভয়াবহ রূপ নেওয়ার জন্য সান্তা অ্যানাস নামের ঝোড়ো বাতাসকে দায়ী করা হচ্ছে। গত শুক্রবার রাত থেকে এই বাতাসের গতি কমে আসায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু মরু অঞ্চল থেকে আসা এই বাতাসের গতি আবার বাড়তে শুরু করেছে এবং আগামী কয়েক দিনে এটি আরও শক্তিশালী হবে বলে জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের পশ্চিমের শহর মালিবুর মেয়র ডগ স্টুয়ার্ট। তিনি বলেছেন, ‘বাতাস শক্তিশালী হবে এবং সপ্তাহের প্রথম কয়েক দিন তা ঝোড়ো গতিতে বয়ে যাবে। এতে বিপদ আবার বাড়তে পারে।’
এদিকে দাবানলে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ১৬-তে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের মেডিকেল এক্সামিনার কার্যালয় (মৃত্যুর তথ্যদানকারী স্বাস্থ্যবিষয়ক কার্যালয়)। তার মধ্যে পাসাডেনার কাছে ইটন দাবানলে ১১ জন এবং প্যালেসেইডস দাবানলে ৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।
গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া দাবানলে লস অ্যাঞ্জেলেসের সৈকত শহর মালিবুর এক-তৃতীয়াংশ পুড়ে গেছে। গত শনিবার এক বৈঠকে মালিবুর মেয়র ডগ স্টুয়ার্ট এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে মালিবু তিনটি দাবানলের মুখোমুখি হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্যালেসেইডস দাবানল।’
লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ বর্তমানে নগরের চারপাশে প্রধান চারটি দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সবচেয়ে বড় দাবানল প্যালেসেইডস। ক্যাল ফায়ার থেকে বলা হয়েছে, প্যালেসেইডস দাবানলটি ২৩ হাজার ৬৫৪ একর এলাকাজুড়ে জ্বলছে। এ দাবানলের ১১ শতাংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
দ্বিতীয় বড় আগুন জ্বলছে ইটনে। ১৪ হাজার ১১৮ একরজুড়ে জ্বলতে থাকা দাবানলের ১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। কেনেথ দাবানল জ্বলছে ১ হাজার ৫২ একরজুড়ে। এটির ৯০ শতাংশই এখন নিয়ন্ত্রণে। আর হার্স্ট দাবানল জ্বলেছে ৭৯৯ একরজুড়ে। এটির ৭৬ শতাংশ এখন নিয়ন্ত্রণে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীর প্রধান অ্যান্টনি ম্যারোন বলেন, ‘ওই বাতাস বুধবার পর্যন্ত থাকবে এবং দাবানল ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার মতো উদ্বেগজনক আবহাওয়ার সৃষ্টি করবে। এতে গত সপ্তাহের মতো দাবানল আবার জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে।’
দাবানলে মালিবুর জনবসতিপূর্ণ এলাকার ধ্বংসচিত্র তুলে ধরতে গিয়ে মেয়র স্টুয়ার্ট বলেন, ‘প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ের পাশ ধরে সুন্দর সুন্দর বাড়িগুলো শেষ হয়ে গেছে। বিগ রকের জনবসতিরও একই অবস্থা। সামনে আমাদের পুনর্নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞে নামতে হবে। কিন্তু আমরা দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম ধাপ থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারিনি।’
এদিকে দাবানলে সৃষ্ট ধোঁয়া থেকে রক্ষার জন্য শহরবাসীকে ঘরের ভেতর থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকর্তারা এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা অনিশ মহাজন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সবাই দাবানলের ধোঁয়ার ক্ষতি বুঝতে পারছি। এতে অতি ক্ষুদ্র কণা, গ্যাস ও জলীয়বাষ্প মিশে আছে। এই ছোট ছোট কণা আমাদের নাক ও গলায় ঢুকে যায়। এতে গলা ও মাথাব্যথা হয়। তাই যেসব এলাকায় দৃশ্যমান ধোঁয়া বা ধোঁয়ার গন্ধ রয়েছে, এমনকি যেখানে আপনি তা দেখতে পান না, সেখানেও বাতাসের মান খারাপ। তাই যতটা সম্ভব বাইরে যাওয়া কমিয়ে আনা উচিত।’
এ পরিস্থিতিতে সুস্থ ব্যক্তিদেরও যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকা উচিত। কোনো না কোনো বায়ু পরিশোধনব্যবস্থা ব্যবহার করা উচিত বলে জানালেন অনিশ মহাজন।
ঘরের বাইরে কাজে গেলে এন-৯৫ মাস্ক পরার পরামর্শ অনিশ মহাজনের। সেই সঙ্গে তরুণ, প্রবীণ ও অসুস্থ মানুষদের এ সময়টায় বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত বলেও তার মত।
লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনের সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার। এরপর কয়েকটি জায়গায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। শত চেষ্টার পরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না আগুন। পুড়ে ছারখার হচ্ছে এলাকার পর এলাকা।
দাবানলে এখন পর্যন্ত দেড়শ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে লুটপাট চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। লুটপাট ঠেকাতে একটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, দাবানলের ধোঁয়ার কারণে গত শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেসে জনস্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে বিপজ্জনক ছাই তুলতে পারে এমন যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
সূত্র : বিবিসি