জাপান
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৯ এএম
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৪৯ এএম
ছবি : সংগৃহীত
এশিয়ার বিভিন্ন শহরের মধ্যে জাপানের রাজধানী টোকিও বর্তমানে একটি নতুন সংকটে জড়িয়ে পড়েছে, যা হলো যৌন পর্যটন। একসময় এটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি শহর ছিল, কিন্তু এখন এটি যৌন ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে, অর্থনৈতিক সমস্যা ও দারিদ্র্য বাড়ার ফলে অনেক নারী যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আশঙ্কার বিষয় হলো, অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র এই শহরটি এখন ‘যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্রে’ পরিণত হচ্ছে। অনেকে এক্ষেত্রে টোকিওর নাম শুনলে অবাক হবেন। তবে অর্থনৈতিক সমস্যা থাকায় শহরটির অনেক নারী এখন যৌনকর্মীর পেশা বেছে নিচ্ছেন।
তরুণদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান লিয়াজোঁ কাউন্সিল প্রটেকটিং ইয়ুথের মহাসচিব ইয়োশিদে তানাকা সংবাদমাধ্যম দ্য স্টারকে বলেছেন, ‘জাপান গরিব দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের সংস্থার পাশের পার্কে যৌনতা বেচাবিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে পার্কটির আশেপাশে অনেক বিদেশি পুরুষকে দেখা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন অনেক বেশি বিদেশি পুরুষদের দেখছি। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন। এর মধ্যে রয়েছে শ্বেতাঙ্গ, এশিয়ান, কৃষ্ণাঙ্গÑ তবে বেশিরভাগই চীনের। ২০ বছর বয়সি উঠতি তরুণীরা জীবনধারণের জন্য সেক্স ইন্ডাস্ট্রিকে বেছে নিচ্ছে।’ এই অধিকারকর্মী আরও বলেন, ‘বাস্তবতা হলো জাপান এমন দেশে পরিণত হয়েছে যেখানে বিদেশি পুরুষরা নারীদের পেতে পারে ও তাদের সঙ্গে যৌনকর্ম করতে পারে।’
সম্প্রতি জাপানের একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, জাপানে অবস্থিত প্রত্যেক শ্রেণির মানুষের মধ্যে এ খাতের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষত তরুণ ও বেকার শ্রেণির অনেকেই সংসারের বদলে নিজেদের জৈবিক চাহিদা পূরণে টোকিওর বিভিন্ন সেক্স ডিস্ট্রিক্টে ঘুরতে যান। যদিও জাপানে ঐতিহাসিকভাবে গিশা নামক এক ধরনের যৌনকর্মী ছিল। কিন্তু তারা মূলত অভিজাত শ্রেণির কাউকে সঙ্গ দিতেন।
জাপানে এখন দেহ ব্যবসা মাত্রাতিরিক্ত আকার ধারণ করেছে। লিয়াসন কাউন্সিল প্রটেক্টিং ইউথ নামক সংস্থার পরিচালক ইয়োশিহিডে তাকাডা জানান, চীনাদের আগমন বাড়তে শুরু করেছে। করোনার পর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পর তারা এই পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় বাড়িয়েছে। অর্থনৈতিক চাপে তরুণ বিশেষত বিশোর্ধ্ব অনেক তরুণ-তরুণী আয়ের জন্য এই খাতকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এরই সুযোগ নিচ্ছে কিছু চক্র।
জাপানের এসব পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে একটি ওকুবো পার্ক। যৌন নিপীড়নের শিকার মানুষদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন পাপসের মুখপাত্র কাজুনা কানাজিরি জানান, ওকুবো পার্কে সচরাচর মানুষ যৌন বিনোদনের জন্যই ভিড় করে। এখানে অনেক মানুষই থাকে যারা সরাসরি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তরুণ-তরুণীদের অনেকেই কিছু চক্রের হাতে পড়ে নিপীড়নের শিকার হয়। গত বছর জাপান পুলিশ ওকুবো পার্কে অভিযান চালিয়ে ১৪০ যৌনকর্মী নারীকে গ্রেপ্তার করে। তারা সেখানে সড়কে দাঁড়িয়ে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ। এরপর অবশ্য আর কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি।
মেট্রোপলিটন পুলিশের মতে, সড়কে দেহ ব্যবসা করার জন্য অন্তত ৪৩ শতাংশ নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তারা জানায়, ওকুবো পার্কের হোস্ট ক্লাব ও আন্ডারগ্রাউন্ডের পুরুষ আইডলরা তাদের এ কাজে বাধ্য করে। এক্ষেত্রে ১৯ ও ২০ বছর বয়সি তরুণীর সংখ্যাই বেশি। টোকিওর কাবুকিচো এলাকায় অন্তত ২৪০-২৬০টি হোস্ট ক্লাব রয়েছে। প্রতি ক্লাবে এক সেশনের জন্য ২০ হাজার ইয়েন গুনতে হয়। কয়েকজন কর্মীকে হোস্ট ক্লাবে কোটা সুবিধা দেওয়া হয় যাতে তারা দিনের আয় দিনে পায়। এ ধরনের খাতে ব্যবসায় জড়িতদের যৌনরোগে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যাও বাড়ছে।
জাপানে অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্মে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু সেখানেও ফাঁকফোকর রয়েছে বলে হোস্ট ক্লাবের উদ্ভব। আইন অনুযায়ী, দেহ ব্যবসায় জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হলে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার ইয়েন জরিমানা করা হয়। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের ধরা হয় না।
বিষয়টি এখন গুরুতর সমস্যায় পরিণত হয়েছে বলে জাপান টাইমসকে জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা কাজুনোরি ইয়ামানোই। তিনি বলেন, ‘এটি এখন আর কোনো অভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়। বিশ্বব্যাপী জাপানি নারীদের যেভাবে দেখা হচ্ছে সেদিক দিয়ে এটি খুবই গুরুতর সমস্যা। বিদেশিরা এসে আমাদের দেশের নারীদের সহজলভ্য ভাবছে। দুঃখজনক। জাপান সত্যিই দরিদ্র হয়ে পড়ছে।’
এই সেক্সের সঙ্গে জড়িত আছে কিছু চক্র। তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছে দেশটির পুলিশ। গত সপ্তাহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেহ ব্যবসার জন্য নারীদের খোঁজ করছিল।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস, মোর নিউজ