প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪০ এএম
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৪৭ এএম
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন সংঘাত আঞ্চলিক যুদ্ধ থেকে বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) তিনি পশ্চিমাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া পাল্টা আঘাত করতে প্রস্তুত। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া ইতোমধ্যে একটি নতুন ধরনের মাঝারি পাল্লার হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনের একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। ভবিষ্যতে আরও এমন আক্রমণ হতে পারে। তবে আঘাতের আগে বেসামরিক জনগণকে সতর্ক করা হবেÑ এ কথাও তিনি জানিয়েছেন।
তার বক্তব্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অনুমোদনে ইউক্রেন নভেম্বরের ১৯ তারিখে ছয়টি এএটিএসএমএস এবং ২১ নভেম্বর ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ও মার্কিন হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালায়। তখন থেকে আঞ্চলিক সংঘাত বৈশ্বিক রূপ নিতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে একটি বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। আর এক্ষেত্রে আগ্রাসী কার্যক্রম বাড়লে সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত রাশিয়া। খবর মস্কো ডেইলির।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, মার্কিন এএটিএসএমএস দিয়ে চালানো ইউক্রেনীয় হামলায় তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। তবে ২১ নভেম্বর স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কুরস্ক অঞ্চলে একটি কমান্ড সেন্টারে হামলা চালানো হয়েছে। এতে প্রাণহানি ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, শত্রুর এমন অস্ত্র ব্যবহার সামরিক কার্যক্রমের গতিপথ বদলাতে পারবে না। পুতিন বলেন, যেসব দেশ তাদের অস্ত্র আমাদের সামরিক স্থাপনায় ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে, তাদের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত করার অধিকার রাশিয়ার রয়েছে। কেউ যদি এটি নিয়ে সন্দেহ করে, তবে তারা ভুল করছে। এর প্রতিক্রিয়া অবশ্যই হবে।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের ১৮ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে পুরো ক্রিমিয়া, ৮০ শতাংশ ডনবাস অঞ্চল এবং জাপোরিজ্জিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭০ শতাংশের বেশি ভূখণ্ড। ইউক্রেন ও পশ্চিমারা রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ডকে সাম্রাজ্যবাদী ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা হিসেবে দেখছে এবং আশঙ্কা করছে যে, ইউক্রেন জয়ী হলে রাশিয়া ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশেও আক্রমণ করতে পারে। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম পোল্যান্ডের ওপর হামলার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি সার্বিয়ার প্রেসিডেন্টও জানিয়েছেন পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।
পুতিন বলেছেন, রাশিয়া সম্প্রতি ‘ওরেশনিক’ নামে একটি নতুন মাঝারি পাল্লার হাইপারসনিক নন-নিউক্লিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ইউক্রেনের ডনিপ্রো শহরে অবস্থিত একটি ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। তিনি দাবি করেছেন, এই আঘাত সফল হয়েছে। পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন পদক্ষেপ একটি বড় ভুল। রাশিয়া একতরফা আইএনএফ চুক্তির আওতায় থাকা ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে পুতিন বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ পশ্চিমাদের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের সাম্প্রতিক মন্তব্য ইউক্রেন সংঘাতকে আরও জটিল ও বিপজ্জনক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা অস্ত্রের ব্যবহার এবং রাশিয়ার পাল্টা হামলা বিশ্বকে নতুন এক সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সূত্র : রয়টার্স