নিউইয়র্কের হিলটন মিডটাউনে বুধবার নির্বাচনী ফল দেখতে জড়ো হন ট্রাম্পের সমর্থকরা। ইলেকটোরাল ভোটে ট্রাম্পের ২৭০ ম্যাজিক ফিগার স্পর্শের সময়েই উল্লাসে ফেটে পড়েন সমর্থকরা। ছবি : দ্য গার্ডিয়ান
বিগত আট বছরে তিনটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন ট্রাম্প। তিনটির মধ্যে দুটিতেই জয় তার। তবে এবারের জয় ব্যতিক্রম। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের দখলে গোটা সিনেট। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে সিনেটে এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা সচরাচর দেখা যায় না। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথমবার নির্বাচিত হন ট্রাম্প। পরে ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে যান তিনি। গত নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর এবারও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন ট্রাম্প। সাম্প্রতিক ইতিহাসে আমেরিকায় এমনটা খুব একটা দেখা যায়নি। শেষবারের মতো রিচার্ড নিক্সন নির্বাচন করেছিলেন। তবে লাগাতার তিনটি নির্বাচনে লড়াই করে প্রথম ও তৃতীয় দফায় জেতা দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হতে চলা রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ঈশ্বর একটি কারণে আমার জীবন রক্ষা করেছেন।আমাদের সামনে যে কাজ রয়েছে, তা সম্পাদন করা সহজ হবে না। কিন্তু, আপনারা যে দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করেছেন, তা পালন করতে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা চালাব।' এর আগে এমন ঘটনা শেষ ও একবারই ঘটেছিল ১৮৯২ সালে। তবে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে ট্রাম্পের হাতে গোটা সিনেট চলে যাওয়ায়। ২০২০ সালে কোনোমতে ডেমোক্র্যাটরা জয় ছিনিয়ে আনলেও এবার সিনেটের দখল রাখার ক্ষেত্রে তাদের বড় লড়াইয়ের প্রয়োজন ছিল। গত এক যুগ পর আবার সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পেয়েছে। এর প্রভাবও ব্যাপক। এবারের নির্বাচনে এমনিতেও ডেমোক্র্যাটরা কিছুটা ঝামেলায় ছিলেন। অন্তত ৯টি ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেটে সিনেট আসন বাঁচানোর লড়াইয়ে ছিল দলটি। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের রক্ষা করতে হতো তিনটি। ভোটের ফল পাওয়ার পর বরং রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তিনটি আসন। অর্থাৎ সিনেটের বড় বদল একটি থিতু কেবিনেট দিচ্ছে ট্রাম্পকে।
যুক্তরাষ্ট্রে গত মঙ্গলবারের ভোটের পর গতকাল বুধবার ২৭৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের চেয়ে অনেক এগিয়ে। অন্যদিকে কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৪টি ইলেকটোরাল ভোট। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে সিনেট এবং প্রতিনিধি পরিষদের ভোটের ফলাফলেও। একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার পাশাপাশি গত মঙ্গলবার মার্কিন ভোটাররা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের সবকটির প্রতিনিধি এবং ৩৪টি সিনেট আসনের সিনেটর নির্বাচন করতে ভোট দিয়েছেন। সিনেটের যেসব আসনের ফলাফল এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তাতে রিপাবলিকানরা এরই মধ্যে ৫২টি আসন নিশ্চিত করে ফেলেছেন বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। ডেমোক্র্যাটরা ৪২টি আসনের দখল পেয়েছেন। গতবারের তুলনায় এবার সিনেটে তিনটি আসন বেশি পেয়েছে রিপাবলিকানরা। অন্যদিকে ৩টি আসন খুইয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিনিধি পরিষদে এখন পর্যন্ত রিপাবলিকানরা ১৯৮টি এবং ডেমোক্র্যাটরা ১৮০০টি আসন নিশ্চিত করেছেন। বর্তমান প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এবারের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এমন ফলে ওয়াশিংটনে পাশার দান উল্টে গেল। সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতায় হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ক্ষমতায়ন আরও পোক্ত হলো। আপাতত ডেমোক্র্যাটদের কয়েকটি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষতিপূরণ করা ছাড়া কিছুই করার নেই। ফ্লোরিডায় জিওপি সিনেটর রিক স্কট রিপাবলিকান ডেবি মারকাসেল পাওয়েলের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন। এই নারী মূলত ফ্লোরিডায় ছয় সপ্তাহের গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে নিজের ক্যাম্পেইন সাজিয়েছিলেন। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কথা বিবেচনায় তার জেতার কথা। কিন্তু নির্বাচনী ফলে বোঝা গেল তার এই পদক্ষেপ কাজে দেয়নি। ডেমোক্র্যাটদের সুযোগ ছিল টেক্সাসে। এই অঙ্গরাজ্যে তারা মাল্টিমিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু টেড ক্রুজকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি। টেক্সাসে জয়ের আশা ধুলোয় মিশে গেল। নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যে ডেব ফিশার অবশ্য অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন। তিনি স্বাধীন ডেন অসবর্নকে হারিয়েছেন। ডেন অসবর্নের পরাজয়ে ডেমোক্র্যাটদেরও বড় ক্ষতি হয়েছে। অন্তত একটি আসন রিপাবলিকানদের দখল থেকে সরানো যেত।
সিনেটে বড় ব্যবধানে জয় ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির জন্য বড় শুভবার্তা। সিনেটে জয় মানে ট্রাম্পের এজেন্ডা, ক্যাবিনেট অফিসিয়াল নিশ্চিত করা এবং ফেডেরাল জাজদের আজীবনী নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত। ফলে ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের ওপরও নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা পাবেন। নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র অর্থাৎ কর, স্বাস্থ্যনীতি থেকে শুরু করে শক্তি খাতের ওপরও তার নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছে। আগের মেয়াদে ২৩৪ জন জাজকে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এবারও তাহলে নীতি বাস্তবায়নে ট্রাম্পকে বড় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হবে না। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত জিওপির বাড়তি সুবিধা থাকলেও এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট সিনেটররা স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছেন।
সূত্র : ইউএসটুডে, সিএনএন, নিউইয়র্ক পোস্ট, ভক্স