× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হিলারি থেকে কমলা, বৃত্ত ভাঙার ব্যর্থ লড়াই

মনির হোসেন রনি

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৮ এএম

আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:২০ এএম

কমলা হ্যারিস

কমলা হ্যারিস

কমলা হ্যারিস, নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্পÑ কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? এমন সব জল্পনা-কল্পনার অবশেষে অবসান ঘটল। বহু তর্ক-বিতর্ক ডিঙিয়ে, বিরূপ মন্তব্য ও সমালোচনার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর আলো দেখিয়েও একরাশ হতাশা নিয়ে পরাজিত হলেন কমলা হ্যারিস। 

৭৮ বছর বয়সি রিপাবলিকান এই প্রার্থী দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে ইতিহাস গড়ার সুযোগ ছিল কমলারও। জয়ী হলে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস গড়তে পারতেন। যা নারীর ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে থাকত। তবে কমলার সেই স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেল।

নির্বাচনের আগে নানা জরিপ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঘা বিশেষজ্ঞদের চুলচেরা বিশ্লেষণে এগিয়ে ছিলেন কমলা। তবে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়ে অবেশেষে তাকে হারিয়ে দিলেন ট্রাম্প। কিন্তু কেন এ ভরাডুবি কমলার? উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে করা বিভিন্ন প্রতিবেদনÑ

অর্থনীতি

এবারের ভোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল অর্থনীতি। করোনাভাইরাস মহামারির পর থেকে মুদ্রাস্ফীতি এমন উচ্চপর্যায়ে পৌঁছেছে যে এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় এটাই ছিল ট্রাম্পের প্রধান ‘ট্রাম্প কার্ড’। মুদ্রাস্ফীতিই ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ দিয়েছে, ‘আপনি কি চার বছর আগের চেয়ে এখন ভালো আছেন?’ ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কমলা নির্বাচিত হলে আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকবে না, বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দেবে। কর্মীদের বেতন কাঠামোর মধ্যে হেরফের ঘটবে। বাড়বে আয় বৈষম্য। মার্কিন নাগরিকরা তার বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। তবে কমলা হ্যারিস তথাকথিত পরিবর্তনের প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। অজনপ্রিয় জো বাইডেনের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে লড়াইও করেছিলেন তিনি। কিন্তু কমলা হ্যারিসের প্রতি শেষ পর্যন্ত আস্থা রাখতে পারেননি মার্কিন নাগরিকরা।

ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে ব্যর্থ

শুরু থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালায় ট্রাম্প। কিন্তু গত জুলাইয়ের শেষ দিকে প্রার্থিতা ঘোষণার পর নির্বাচনের মাঠে নামেন কমলা হ্যারিস। নির্বাচনে কমলা হ্যারিসই যে একমাত্র যোগ্য প্রার্থীÑ সে সম্পর্কে জনগণের কাছে ইতিবাচক কোনো ইমেজ তুলে ধরতে পারেননি তিনি। যদিও চেষ্টা করেছিলেন। অন্যদিকে, কমলা সম্পর্কে নানা সময়ে বাজে মন্তব্য করে জনসমর্থন আদায় করার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প। শেষমেশ তা কাজেও লেগেছে। সর্বোপরি কমলা হ্যারিস একজন নারী। এ বিষয়টিও ভোটে প্রভাব ফেলেছে।

কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিক ভোটে ঘাটতি

ডেমোক্র্যাটরা দীর্ঘদিন ধরেই কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিকদের সমর্থন বেশি পেয়ে এসেছে। কিন্তু এবার এই হিসপ্যানিক পুরুষদের সমর্থন কমলার প্রতি কম ছিল। এবারের নির্বাচনের ফল বলছে, এই দুই শ্রেণির ভোটারদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন পাননি কমলা।

বরং উল্টো কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপ্যানিসদের একটি বড় অংশের ভোট গেছে ট্রাম্পের পক্ষে। ১৯৭০-এর দশক থেকেই হিসপ্যানিক ভোটাররা বেশিরভাগ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের অনেক বেশি সমর্থন দিয়ে এসেছিল। অথচ এবারের নির্বাচনে তাদেরই উল্লেখযোগ্য সমর্থন পেয়েছেন ট্রাম্প।

তেমন ভোট দেননি নারীরাও

কমলাকে প্রেসিডেন্ট করার জন্য নারীরা সেভাবে এগিয়ে আসেনি। বারাক ওবামা ২০১২ সালে নারীদের মধ্য থেকে ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। আর কমলার জুটেছে ৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে, নারীর প্রতি ট্রাম্পের আচরণ নিয়ে অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করলেও ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ নারী ভোট।

অবৈধ অভিবাসন নিয়ে উদাসীন কমলা

অর্থনৈতিক অবস্থার বাইরেও আবেগের টান আছে এমন কোনো বিষয় থেকেই প্রায় ক্ষেত্রে নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে দেয় ভোটাররা। বাইডেনের শাসনামলে সীমান্তে বিনা বিচারে হত্যার সংখ্যা রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। সীমান্ত থেকে দূরের রাজ্যগুলোতে অভিবাসনের সংখ্যাও প্রভাব ফেলেছে। এর প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, অভিবাসনের বিষয়ে ট্রাম্পের ওপর বেশি আস্থা রেখেছে মার্কিন নাগরিকরা। অবৈধ অভিবাসনে কমলার উদাসীনতার কারণে যুবকদের ভোট কমেছে।

বৈশ্বিক শান্তির ঘোষণা

নির্বাচনী প্রচারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানের পাশাপাশি ইউক্রেন ও গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, আফগানিস্তানে তালেবান ইস্যুসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কথা বলেননি কমলা। অথচ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সমস্যাগুলো সামনে এনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, নির্বাচিত হলে বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনবেন। সে কারণে কমলার ওপর আস্থা রাখতে পারেননি মার্কিন নাগরিকরা। এ ছাড়া মার্কিন নাগরিকদের বিশ্বাস, যুদ্ধ-বিগ্রহ থামানোর সক্ষমতা একমাত্র পুরুষদের রয়েছে। নারী নেতৃত্বে গেলে যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়ুক এমনটা চাননি মার্কিন নাগরিকরা।

নারী নেতৃত্বে ভরসা পাননি মার্কিনিরা

এবারও নারী নেতৃত্বে ভরসা রাখতে পারল না যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় আড়াইশ বছর পার হয়ে গেলেও কোনো নারী প্রেসিডেন্টের মুখ আমেরিকা দেখতে পায়নি। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতা নিয়ে ব্যাপক সরব যুক্তরাষ্ট্রে এখনও কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি।

২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন জয়ের খুব কাছে গিয়েও ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কেবল নারী হওয়ায় বিদ্বেষের শিকার হয়েছিলেন হিলারি। তারপর এবার নারী নেতৃত্বের অগ্নিশিখা হয়ে হাজির হয়েছিলেন কমলা। তার বিশ্বাস ছিল এবার একজন নারী প্রেসিডেন্টকেই বেছে নেবে মার্কিনিরা। কিন্তু তার স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল। এবারও মার্কিনিরা পুরুষ নেতৃত্ব হিসেবে ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অন্যান্য দেশের তুলনায় জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা বেশি, যা নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। মূলত দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভোটগণনা নারীদের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। জার্মানি, যুক্তরাজ্যের মতো সংসদীয় ব্যবস্থা থাকলে যুক্তরাষ্ট্রেও নারী নেতৃত্ব এগিয়ে যেত।

এদিকে নির্বাচনের আগে নানা জরিপ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঘা বিশেষজ্ঞদের চুলচেরা বিশ্লেষণে এগিয়ে ছিলেন কমলা। তবে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়ে অবেশেষে তাকে হারিয়ে দিলেন ট্রাম্প। 

২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে থেকেও পরাজিত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে যদি সবচেয়ে বেশি প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিয়ম থাকত, তাহলে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতেন হিলারি ক্লিনটন। সেবার তিনি দুই লাখের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। 

নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন মোট ভোট পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৫ ভোট। ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৬ ভোট। কিন্তু ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৭৯টি, আর হিলারির পক্ষে গেছে ২২৮টি। মূলত এসব ভোটের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আর ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা