ফ্যাক্টর নারী ভোটার
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:২৩ পিএম
গ্রাফিক্স প্রবা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আর এক দিন। একদম শেষ পর্যায়ে গতকাল শনিবার আটলান্টায় ভোট ক্যাম্পেইন র্যালি করেন কমলা। সেখান থেকে সন্ধ্যায় শারলোটে আরেকটি র্যালিতে যোগ দেন। অন্যদিকে ট্রাম্পও নিউইয়র্কের গ্যাস্টোনিয়ায় এক র্যালিতে যোগ দিয়েছেন। সেখান থেকে সালেম, ভার্জিনিয়ায় র্যালি শেষে টার হিল স্টেট বর্ডারের ক্লান্তিকর ভ্রমণ সারেন। মুখ্যত নির্বাচনী প্রচারে বক্তব্যের পাট চুকে গেছে। এখন র্যালির মাধ্যমে জনসংযোগ করছেন দুই প্রার্থী। দুজনই মূলত নির্বাচনের শেষ ধাপে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। ট্রাম্প নারীদের অধিকার বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্যের মাধ্যমে সমর্থন আদায় করতে চাচ্ছেন। বিশেষত ল্যাটিনো নারী ভোটারদের দিকেই মনোযোগ তার। অন্যদিকে রক্ষণশীল ও পুরুষ ভোটারদের সমর্থন আদায়ের জন্য কমলাকে কিছুটা বেপরোয়া দেখা যাচ্ছে। যদিও শেষ প্রহরে জনমত সমীক্ষায় ১ পয়েন্টে ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেন কমলা, তবুও এবারের নির্বাচনে নারী ও পুরুষ ভোটারের বিভাজন বড় পার্থক্য গড়তে পারে।
আর্লি ভোটে নারী ভোটার বেশি
এবারের নির্বাচনে নারী-পুরুষ ভোটারের বিভাজন বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। ডেমোক্রেটিক অ্যালাইন্ড ফার্মের এক জরিপে দেখা গেছে, সাতটি সুইং স্টেটে ৫৫ শতাংশ নারী এবং ৪৫ শতাংশ পুরুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। টার্নিং পয়েন্ট অ্যাকশনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ‘পুরুষ ভোটাররা ভোট দেওয়ায় কম আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। তারা যদি ভোট না দেন তাহলে কমলা জিতছেন। সহজ হিসাব।’ তবে এই জরিপে ট্রাম্প পিছিয়ে পড়লেও ট্রাম্পের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে এমন না। কারণ এখন পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসনের কিছু নীতিমালা বামপন্থি নারীদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা হুমকিতে ফেলেছে। তারপরও এ সংখ্যা বেশি নয়। কমলার জন্য নারী ভোটার এখনও বড় শক্তি।
ট্রাম্পের নারী ভোটারদের সমর্থন কমার কারণ
দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবির অর্থনীতি আর কিছু সরল ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে প্রচারণা চালিয়েছিল। তারা ভেবেছিল এসব বিষয়ই তাদের দলে নারী ভোটারের সমর্থন নিয়ে আসবে। বিশেষত ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি ট্রান্সজেন্ডারদের নারী ক্রীড়া থেকে দূরে রাখবেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাট শিবিরের বাটন কমলার হাতে আসার পর পাশার দান গেল উল্টে। কমলা আসার পর ট্রাম্পের প্রচারাভিযান নতুন সুর খুঁজে বের করতে পারেনি। তা ছাড়া ট্রাম্পের নির্বাচনী কৌশল নিয়েও সমালোচনা এসেছে ভীষণ। হ্যারিসের কট্টর সমর্থক মার্ক কিউবান সম্প্রতি জানান, ‘নারী ভোটাররা তো ট্রাম্পকে এড়িয়ে চলবেই। তিনি তার নিজ দলের নারী রাজনীতিকদের প্রচারে গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করেন না। তিনি বুদ্ধিমতী নারী রাজনীতিকদের কোণঠাসা করে রাখেন।’ তবে রিপাবলিকান আইনবিদ ও ট্রাম্পের প্রচার দলের সদস্য সুসি উইলস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানান।
রিপাবলিকানদের একটি অংশ জানিয়েছে, নারী ভোটারদের সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ পুরুষদেরই জনসংযোগে বেশি কাজে লাগিয়েছেন। তা ছাড়া তার প্রচার শিবিরে নারী প্রতিনিধি কম এবং তাই নারীদের আবেদন তিনি প্রকাশ করতে পারেননি। এক্ষেত্রে নারীদের স্বাস্থ্যনীতির বিষয়ে কেনেডি জুনিয়রকে অন্তর্ভুক্ত করাও তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ। বিশেষত ট্রাম্প এক সময় ছয়টি অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধের পক্ষে বক্তব্য দেওয়ায় নারী সমর্থন আরও কমেছে। নির্বাচনের একদম শেষ ধাপে নারী ভোটারদের প্রাধান্য না দেওয়ায় যেন আচমকা পেছনে পড়েছেন ট্রাম্প।
নারী ভোটার নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই কমলার
নারী ভোটারদের নিয়ে কমলার শঙ্কিত হওয়ার খুব বড় কারণ নেই। বিদায়ি অক্টোবরে অ্যালেক্স কুপারের নারীবিষয়ক পডকাস্ট ‘কল হার ডেডি’তে কমলা হ্যারিস সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তখন কুপার ট্রাম্পকেও সাক্ষাৎকারের আহ্বান জানালেও শেষ পর্যন্ত তিনি আগ্রহ দেখাননি। সম্প্রতি এবিসি নিউজ ও ইপসোসের ন্যাশনাল জরিপে দেখা গেছে, নারী সমর্থনে ট্রাম্প কমলার তুলনায় ১৪ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছেন। ফলে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে তার নির্বাচনী র্যালিগুলোতে নারী সমর্থকদের নিজ দলে টানার জোর চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এমন নয় ট্রাম্প কোনো সাক্ষাৎকার দেননি, তবে তিনি মূলত এমন কিছু অনলাইন শোয়ে গিয়েছেন যেগুলোর বিরুদ্ধে পুরুষতান্ত্রিকতা ও রক্ষণশীলতার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য ট্রাম্প নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে পডকাস্ট, টেলিভিশন চ্যানেল এড়িয়ে চলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বিবেচনায় নারীরা পুরুষের তুলনায় কিছুটা হলেও বেশি। তা ছাড়া পুরুষদের তুলনায় নারী ভোটারদের ওপর বেশি আস্থা রাখা যায়।
সম্প্রতি নারী ভোটারদের সমর্থনের জরিপের পর রিপাবলিকান শিবিরে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে ট্রাম্প সম্প্রতি এক র্যালিতে বলেছেন, ‘নারীরা শুধু গর্ভপাত চান। শুধু একটি ভাবনায় কেন। আমি নারীদের রক্ষক হবো।’ তবে এই বক্তব্যের পর তোপের মুখে পড়েন ট্রাম্প। উইসকনসিনের গ্রিন বের ওই র্যালিতে নারীদের ‘রক্ষক’ বলে নিজেকে জাহির করার পর নারী সমর্থকদের আগ্রহ আরও কমতে শুরু করেছে। যদিও দ্রুতই ট্রাম্প উপস্থিত মিছিলের তোপের সামনেই বলেন, ‘রাগবেন না। আমি দেশের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। কেন? কারণ আমি প্রেসিডেন্ট। নারীরা পছন্দ করুক বা না করুক, আমি তাদের রক্ষা করবই।’ যদিও কীভাবে তিনি রক্ষা করবেন তা স্পষ্ট করতে পারেননি।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পর কমলা থেমে থাকেননি। তিনি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডলে ট্রাম্পের গর্ভপাতবিষয়ক মন্তব্যের একটি ক্লিপ আপলোড করেন। ভিডিওটি ইতোমধ্যে ২৪ লাখ মানুষ দেখেছে।
কমলার সামনে সুবর্ণ সুযোগ
এখনও ট্রাম্প তার নির্বাচনী র্যালিতে পুরুষদেরই বেশি রাখছেন। ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে পুরুষ সমর্থকদের নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ র্যালি করার পর ট্রাম্পকে মিসোজিনিস্টিক বা নারীবিদ্বেষী গাল খেতে হয়েছে। অর্থাৎ নারী ভোটাররাই এখন পর্যন্ত কমলার বড় শক্তি। অন্যদিকে মাত্র এক দিনের মধ্যেই ট্রাম্পের পক্ষে বড় কিছু করা সম্ভব হবে এমনটি মনে হচ্ছে না। সূত্র : সিএনএন, এবিসি নিউজ, ইউএসএ টুডে