প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১২:২০ পিএম
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৪২ পিএম
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গণহত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর এ বিষয়ে বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। চিঠিতে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের ফাঁসি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার (২১ অক্টোবর) এইচআরডব্লিউ তাদের ওয়েবসাইটে বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। তাতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিদ্রোহের সময় যে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে তার বিচারের উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ চলাকালে গণহত্যার অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৪ জনের (প্রকৃত সংখ্যা ৪৬ জন) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ন্যায়বিচারের বিষয়ে আপনার সরকারের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানায়।
বিচারপ্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং মূল স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সংশোধন প্রস্তাব করার আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে আমরা প্রশংসা করি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে কিছু সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া। এইচআরডব্লিউ বলেছে, মৃত্যুদণ্ডের ওপর একটি স্থগিতাদেশ গ্রহণ করুন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার পদক্ষেপ নিন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সব পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে। এটি সহজাত নিষ্ঠুর, অস্বাভাবিক শাস্তি এবং মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তাই এ শাস্তি অপসারণের সুপারিশ করছে এইচআরডব্লিউ।
আইনের ২১ (২) ধারায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করা হয়। বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, রুয়ান্ডার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ টানা হয়। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার লক্ষ্যে ফাঁসি কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার জন্য গৃহীত একটি প্রস্তাবের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামের কাছে পাঠানো হয়েছে। ২৩ অক্টোবর এ তথ্য জানান ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গণহত্যায় সহযোগীদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ট্রাইব্যুনালের কাজ খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে। সংস্কার কাজ শেষে আগামী ১ থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের মূল ভবনে বিচারকাজ শুরু করা যাবে।
এর আগে ১৭ অক্টোবর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের পৃথক মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
অন্য যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তারা হলেন শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, দীপু মনি, আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ সেলিম, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ মামুন, ডিবি হারুন, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক র্যাব ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারিক আনাম সিদ্দিক, বিচারপতি মানিক, ড. জাফর ইকবাল, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামসহ ৪৬ জন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্য দুজন হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।