প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২২ ১৫:২৭ পিএম
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫৮ পিএম
ফ্যান জোনে বসে খেলা দেখছেন শ্রমিকেরা। ছবি : সংগৃহীত
ফিফা বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছড়িয়ে গেছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মনে। কাতারের যে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা একদিনেই সম্ভব হয়নি। এ অনুষ্ঠানে অবদান রয়েছে হাজার হাজার অভিবাসী কর্মীদের। সুন্দর নির্মাণ কাজ দিয়ে যারা এ বিশ্বকাপ উপভোগ্য করে তুলেছেন সে হাজার হাজার কর্মীদেরও দেখা গেছে কাতার ও ইকুয়েডরের ঐতিহাসিক প্রথম ম্যাচ উপভোগ করতে।
আলজাজিরা তাদের প্রতিবেদনে নির্মাতাদের চোখে বিশ্বকাপ কীভাবে দেখেছেন তা প্রকাশ করেছে।
কাতারের রাজধানী দোহার শিল্প এলাকায় ফ্যান জোন থেকে তারা প্রথম ম্যাচ উপভোগ করে।
বিশ্বকাপের অবকাঠামো তৈরিতে যারা নিরলস শ্রম দিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল সেইসঙ্গে আফ্রিকার বেশকিছু দেশের শ্রমিক।
পুরো বিশ্ব যখন রবিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এই কর্মীরাও একই কাজ করছিলেন। তবে তারা শুধু খেলা উপভোগই নয় বরং তারা এর মধ্য দিয়ে তাদের শ্রমের প্রশংসা কুড়ানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
এদের কেউ কেউ সরাসরি চাকরি থেকে ফিরেই ম্যাচ দেখতে বসে গিয়েছিল। কারও ছিল ছুটির দিন, আবার এমন কিছু লোক ছিল যারা ম্যাচটি দেখার জন্য কাজ মুলতবি রাখার অনুমতি নেন।
'এখানে আমি এর মাঝখানে আছি… এবং স্বাভাবিকভাবেই আমি রোমাঞ্চিত,' দোহার এশিয়ান টাউন ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ফ্যান জোন থেকে বলেন বাংলাদেশের শ্রমিক ৪৫ বছর বয়সী মুহাম্মদ হোসেন।
হোসেইন বলেছিলেন কীভাবে তিনি একবার দোহাতে একটি মেট্রো স্টেশন নির্মাণে কাজ করেছিলেন। বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা নতুন অবকাঠামোর মধ্যে এটিও একটি। তিনি জানান, এখন সেখানে তিনি একজন দারোয়ান হিসেবে নিযুক্ত আছেন।
হোসেন বলেন, ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বকাপের অংশ হওয়া একটি 'বড় ব্যাপার'। তাছাড়া মুসলিম বিশ্বে আয়োজিত এটি প্রথম বিশ্বকাপ যা আরও বেশি ভাল লাগার কারণ।
হোসেন আরও জানান, তিনি কখনোই ভাবেননি যে এই দেশের এতো বড় গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রকল্পের অংশ হতে পারবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা ক্রিকেট খেলা দেশগুলোর মধ্যে একটি হলেও তিনি আশা করেন না যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফুটবলে একইরকম সাফল্য পাবে, পেলেও তা যে শিগগিরই নয় সেটিও জানান তিনি।
হোসেন বলেন, 'আমার জীবদ্দশায় আমার দেশের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার বা আয়োজন করার কোনোটিরই হয়তো সুযোগ নেই বাংলাদেশের।'
ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজক কাতার প্রথম মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম দেশ যারা এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট আয়োজন করছে। তবে এ আয়োজনের জন্য দেশকে প্রস্তুত করা একটি কঠিন কাজ। যার বেশিরভাগ সম্পন্ন হয়েছে বিদেশি কর্মীদের সহায়তায়।
ভারতের একজন শ্রমিক পিটার বলেন, 'কাতারের রাস্তায় যে মেট্রো বা বাস দেখা যাচ্ছে তা আগে ছিল না। তাছাড়া কর্নিশে এসব ভবন, মহাসড়ক ও রাস্তাগুলো হয়তো থাকত না যদি এই বিশাল ঘটনাটি না ঘটত।'
'আমি এটা বলতে পেরে খুশি যে, আমরা (অভিবাসী শ্রমিকরা) এ আয়োজনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছি। তিনি ১৫ বছরেরও বেশি সময় আগে কাতারে যান। তথকন থেকে তিনি যুক্ত একটি অপটিক্যাল ফাইবার তৈরির কোম্পানির সঙ্গে।
বিশ্বকাপের উদ্বোধন শুরুর আগেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে ফ্যান জোন। চারপাশে খাবারের স্টল থেকে ছড়িয়ে পড়ে বিরিয়ানির সুগন্ধ। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে কথা বলতে বলতে, উৎসাহ উদ্দীপনায় মেতে থাকতে দেখা যায় বিশাল জনতাকে।
কিন্তু যে মুহূর্তে রেফারি বাঁশিতে ফুঁ দিলেন, ওমনি সবার চোখ আটকে যায় বিশাল ভিডিও স্ক্রিনে।
কাতারের খেলোয়াড়দের প্রতিটা আক্রমণ সবার মধ্যে অন্যরকম আমেজ, উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। আরও সরব হয়ে ওঠে ফ্যান জোন। তবে দুর্ভাগ্যবশত ইকুয়েডরের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে হেরে যায় স্বাগতিক দেশ।
তবুও ভারতের মুম্বাই থেকে আগত শ্রমিক প্রদীপ বলেন, যথাযথভাবে উপভোগ করেছেন তিনি। যদিও স্বাগতিকরা জয় পেলে রাতটা আরও ভালোভাবে শেষ হতো, রাতে রাস্তায় জয় উদযাপন করা যেতো বলেও জানান তিনি।
দোহার শিল্পাঞ্চলের ফ্যান জোনের গেট ম্যাচের ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে খুলে দেওয়া হয়। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বক্তৃতা থেকে শুরু করে কোরিয়ার বিটিএস সুপারস্টার জংকুকের পারফরম্যান্সে শ্রমিকেরা উদ্বোধনী উৎসবে দারুণ উল্লাস আমোদ করেন।
কেউ কেউ এই উদ্বোধন উৎসব ফোনে ছবি তুলে, ভিডিও করে নেন। যাতে করে তাদের এ আনন্দের মুহূর্তগুলো দেশে থাকা আপনজনদের কাছেও পৌঁছে দিতে পারেন।