গাজার খান ইউনিস এলাকায় গতকাল শুক্রবার হামলা চালানোর পর ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আছে এক শিশু (এএফপি)
এক সপ্তাহ ধরে গাজার পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে মিসরের নেতা আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেলের সঙ্গে আলাপ করেন। তবে কায়রো এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হওয়ার পরও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল চার্লস কুইন্টন ব্রাউনকে জানানÑ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক্ষেত্রে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, মধ্যপ্রাচ্য ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। বিশেষত ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যুদ্ধ চলছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের পাশাপাশি মিসরও গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। তবে জার্মানিতে অবস্থানরত মিসরীয় গবেষক হোসাম এল হামালায় মনে করছেন, ‘এসব বক্তব্যের মাধ্যমে সিসি আসলে কাজের কাজ কিছুই করছেন না। বরং মিসরে তিনি রাজনৈতিক ইমেজ আরও স্বচ্ছ করে তুলছেন। এভাবে মিসরে তার ক্ষমতা বাড়লেও গাজা সংকট সমাধানে কাজ হচ্ছে না।’ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম জনসংখ্যাবহুল রাষ্ট্র হিসেবে মিসরের ব্যর্থতাকে ভালো চোখে দেখছেন না হোসাম।
হোসাম অভিযোগ তুলেছেন, গাজায় যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়া মানে সুয়েজ খালের মাধ্যমে মিসরে পর্যটন ও পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়া। সিসি নিজেও বিষয়টি উপলব্ধি করার পরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তবে নিজের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ধামাচাপা দিতে পারছেন মধ্যপ্রাচ্যের সংকট বলে। আইএমএফের ঋণ শোধের সময় তিনি বেইল আউট সুবিধা পাচ্ছেন।
হোসামের মতে, সিসি বলছেন তিনি মধ্যপ্রাচ্যে
সহিংসতা বন্ধে লড়াই করছেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি এই যুদ্ধের ফায়দা নিচ্ছেন। মিসরেও সিসির
বিষয়টি নিয়ে অনেকে জোর প্রতিবাদ করছে। তার মধ্যে সম্প্রতি আশরাফ ওমার নামে এক কার্টুনিস্টকে
গ্রেপ্তার করা হয়। সিসি তার ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতে গণমাধ্যমের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন
বলে অভিযোগ রয়েছে।
শুধু মিসরই নয়।
এই তালিকায় রয়েছে আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও লিবিয়ার মতো দেশগুলোও। জাতিসংঘের নিরাপত্তা
পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে বরাবরই নিজেদের উপনিবেশবিরোধী এবং আরব জাতীয়তাবাদিতার
পক্ষে বক্তব্য দিয়ে আসে। অথচ এ দেশেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারছে
না।
তিউনিসিয়ায় অনেকটা স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীই ক্ষমতায়। দেশটির শাসক কাইস সাইদ বরাবরই ফিলিস্তিনের পক্ষে শক্ত অবস্থানের কথা বলে আসছেন। দেশটির অর্থনীতি নাজুক। অর্থনৈতিক এই ক্ষয়িষ্ণুতার জন্য বরাবরই তিনি ইসরায়েলি আগ্রাসনের কথা বলে আসছেন। তিউনিসিয়ার সাংবাদিক থারওয়া বৌলিফি জানান, আমাদের প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা তার ভাষণে ফিলিস্তিনি ভাইদের স্বপক্ষে আবেগময় ভাষণ দেন।
কিন্তু এ বিষয়ে আরব সম্প্রদায়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর কোনো
উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে তার আগ্রহ নেই। তিউনিসিয়ায় একাধিক বেসরকারি সংস্থাকে ‘বিদেশি গুপ্তচর’
সন্দেহে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। বলা হচ্ছে, তিউনিসিয়াকে ব্যবহার করে এ সংস্থাগুলো
গাজায় অস্থিতিশীলতা চালাতে চায় এবং তিউনিসিয়াকেও অস্থিতিশীল করতে চায়। এসব রাজনৈতিক
চালে আবদ্ধ থাকায় গাজা সংকট সমাধান পাচ্ছে না।