× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নিক্কেই এশিয়ার নিবন্ধ

শেখ হাসিনার চারপাশে ছিল জ্বি ম্যাডাম গোষ্ঠী

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৯:০৮ পিএম

শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

আজ থেকে প্রায় ৪৩ বছর আগে দেশের মাটিতে ফেরেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করে গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইয়ে নামেন। স্বৈরাচার শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার আন্দোলনে শামিল হন তিনি। একসময় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে অংশ নেওয়া শেখ হাসিনাই চলতি বছর স্বৈরাচার তকমা নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হলেন। শুধু ক্ষমতাচ্যুতই নয়, দেশ থেকেও পালাতে হলো তাইকে। গণতন্ত্রের জন্য জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা এক রাজনীতিক; বৈশ্বিক পরিসরেও যাকে অনেকে বিজ্ঞ বলেই মানেসেই রাজনীতিকের এমন পরিণতি নিয়ে অনেকেই বিস্মিত। শেখ হাসিনার এই পতনের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টায় ব্যস্ত বিশ্বের বড় গণমাধ্যমগুলো। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলো জাপানের টোকিওভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া। শনিবার (২৪ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমটির সিনিয়র স্টাফ রাইটার তরু তাকাহাশি একটি নিবন্ধ লেখেন। ওই নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, শেখ হাসিনার সরকার গণমাধ্যম তো বটেই সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দখল নিয়েছিল

 

জনআস্থায় ফাটলের সূত্রপাত

পেশিশক্তির ব্যবহারে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থার চির ধরাবেন শেখ হাসিনা, এমনটি অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি। জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অরগানাইজেশনের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইউমি মুরাইয়ামা নিক্কেই এশিয়াকে জানান, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হনতখন তাকে দেখে মনে হয়নি তিনি কোনোদিন কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করবেন। মাইউমি মুরাইয়ামা মনে করেন, ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার মধ্যে কর্তৃত্ববাদী শাসকের আচরণ দেখা দিতে শুরু করেক্ষমতা পাওয়ার পরপরই সংবিধান থেকে দ্রুত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তুলে নেয়ার চেষ্টা শুরু করেন। অথচ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানের কারণেই মোটামুটি সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছিলেন শেখ হাসিনা

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চাপ ও প্রতিবাদের মুখেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তুলে নেয় শেখ হাসিনা সরকার। এভাবেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনেই ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আসতে থাকে। এভাবেই শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন একনায়কতন্ত্রের প্রতীক। 

 

দমন-পীড়নের রাজনীতি

নিক্কেই এশিয়ার নিবন্ধটিতে লেখা হয়েছে, বিএনপিকে দমাতে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপর মামলা দেয়া হয় এবং তাকে কারাগারে বন্দী করা হয়। বিএনপির বহু নেতা-কর্মীর ওপরও রাজনৈতিক মামলা দেয়া হয়তার শাসনামলে অনেকে গুম হওয়ার অভিযোগও আসে। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। শুধু বিরোধী দলের উপর চড়াও হয়েই ক্ষান্ত হননি শেখ হাসিনা। তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি এক কাল্ট হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করেনসরকারকে সমালোচনা করা কিংবা যৌক্তিকভাবে প্রশ্ন করার অধিকারও নস্যাৎ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাববলয় ছাত্রলীগ

আওয়ামী লীগের ক্ষমতাবলয়ের প্রভাব বেশি দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনবহির্ভূতভাবে সব ধরনের সুবিধায় এগিয়ে থাকতো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। অপ্রকাশ্যে বলা হতো, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের কথায় উঠবস করে। বিভিন্ন হলের সিট বরাদ্দে তাদের প্রভাব নিয়ে অভিযোগ নতুন কিছু নয়আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো প্রোগ্রামে না গেলে হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়া হতো।  ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নামলেও তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভও ছিল।

 

জ্বি ম্যাম গোষ্ঠীর উত্থান

নিজের সুবিধামতো বানানো নীতিতে ভিন্নমত পোষণকারী ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও বরখাস্ত করেছেন শেখ হাসিনা। এ তালিকায় রয়েছেন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, যিনি তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের সচিব ছিলেন এবং পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনা তাঁর বিজ্ঞ উপদেষ্টাদের থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত, কেবল তাঁর বোন রেহানার ওপরই তার আস্থা বেশি ছিল। এক্সটারনাল ট্রেড অরগানাইজেশনের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইউমি মুরাইয়ামা নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, শেখ হাসিনাকে ঘিরে ছিল ইয়েস-ম্যানরা। এই জ্বি ম্যাডাম গোষ্ঠী তাকে ঘিরে রাখার কারণেই মূলত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যুক্তি ও উপলব্ধি বুঝতে পারেননি হাসিনা। এই ইয়েস-ম্যান বলতে আসলে সহমত পোষণকারীদের বুঝিয়েছেন মুরাইয়ামা। 

 

কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪

গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেবে, তা ঘুণাক্ষরেও কেউ কল্পনা করেনি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান নতুন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ করেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন। এরপর সেনাপ্রধান রাষ্ট্রপতি ও গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। নিক্কেই এশিয়ার নিবন্ধে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সর্বজনগ্রাহ্য নির্দলীয় ব্যক্তি এবং তাঁর সততার জন্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। গরীবের ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত ক্ষুদ্রঋণ ধারণার এই প্রবক্তাকে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসাবশত শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন হয়রানি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করে হেনস্তা করেছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করা হয় বিভিন্ন বিশ্লেষক, সাবেক কূটনীতিক, সাবেক ব্যাংক গভর্নর, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের দুজন প্রতিনিধিকে। তবে এই অন্তর্বর্তী সরকার কবে নাগাদ জাতীয় নির্বাচন দেবে, এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায়নি।

নিক্কেই এশিয়ার নিবন্ধে সিনিয়র স্টাফ রাইটার তরু তাকাহাশি বলছেন, বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ নাগরিক আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিকে সমর্থন করেন। বাকিরা হয় অন্য দলকে সমর্থন দেয়, নতুবা কাউকেই সমর্থন দেয় না। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। শিগগির নির্বাচন দিলে বিএনপি আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারে। তবে তারা ক্ষমতায় ফিরলে আওয়ামী লীগকে নির্মূলের পথেই হাটবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

 

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

তরু তাকাহাশি অবশ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছে। প্রশ্নটি হলো, সামরিক ও স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্ত এই সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশ কি শেখ হাসিনার একচেটিয়া শাসনামল থেকে কিছু শিখতে পারবে? আর এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশের দিকেই। এর মধ্যে গণতান্ত্রিক দেশ জাপান রয়েছে। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দেয় দেশটি। এ ছাড়া আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাকিয়ে থাকবে ছোট্ট এই দেশের দিকে। এর বাইরে স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে যেসব দেশ চলছে, তাদের নজরও এখন বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশটির দিকে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা