প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪ ১৮:৫৭ পিএম
রাজধানী নাইরোবির মুকুরু কুয়া জেনগা বস্তির নিকটে জলাশয় থেকে গত রবিবার বস্তাবন্দি ৯ নারীর ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে
কেনিয়ার সিরিয়াল কিলার জুমাইসি খালুসা ৪২ নারীকে হত্যা করার কথা স্বীকার করার পর গোটা দেশে নতুন করে রাজনৈতিক
উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। দেশটির রাজধানী নাইরোবির মুকুরু কুয়া
জেনগা বস্তির নিকটে এক জলাশয় থেকে এখন পর্যন্ত
৯ নারীর ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের নারীদের বয়স ১৮-৩০ বছরের
মধ্যেই বলে জানা গেছে। এই বয়সের নারীদেরই খালুসা সন্ধান করে হত্যা করার চেষ্টা করতেন
বলে জানা গেছে। করবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কেনিয়ায় চলমান আন্দোলনের সময়েও খালুসা কয়েক নারীকে
হত্যা করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা
কমে যেতে শুরু করেছে। এ ঘটনার পেছনে কারণ অনুসন্ধানে একটি বিশেষায়িত দল গঠন করা হয়েছে।
তারা তদন্তের ভিত্তিতে অপরাধীকে আদালতে সোপর্দ করবে বলে জানিয়েছে।
খালুসাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকেই তিনি বিভিন্ন সময় নারীদের
প্রলোভন দেখিয়ে বস্তির পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিয়ে আসতেন। নারীদের সঙ্গে তিনি যৌনলালসা
চরিতার্থ করতেন কি-না, এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে,
নারীদের হত্যা করে তিনি একধরনের আনন্দ পেতেন। বিগত দুই বছরে তিনি অন্তত ৪২ জন নারীকে
হত্যা করার কথা বলেছেন। হত্যার পর তিনি কৌশলে মরদেহ জলাশয়ে ফেলে দিতেন।
সম্প্রতি জসফাইন মুলোংগো ওয়িনো নামক এক নারী নিখোঁজ হওয়ার পর তদন্তে নামে কেনিয়ার
পুলিশ। ওই নারীর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু তিনি সর্বশেষ
মোবাইল ব্যবহারে খালুসার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করেছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে খালুসার কাছে
বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনের পাশাপাশি তার কাছে নাইলন দড়ির গোছা,
একাধিক সেলোটেপ উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিজের স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যার
মাধ্যমে তার এই হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। অন্য নারীদেরও একইভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন
খালুসা। তদন্তকারী কর্মকর্তা ডগলাস কাঞ্জা কিজোরো জানান, ‘মানুষের প্রাণের প্রতি তার
কোনো শ্রদ্ধা ছিল না। বরং হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সে একধরনের আনন্দ পেত।’
এ ঘটনার পর থেকে কেনিয়ার নারী রাজনীতিকরা ইতোমধ্যে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছেন।
তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি দেশটিতে নারী নিরাপত্তা ও পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে। নাইরোবিতে
এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল একটি মিছিল আদালত প্রাঙ্গণ পর্যন্ত পৌঁছায়। ওই সময় খালুসাকে
আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। নারী নেত্রীরা জানান, কেনিয়ার জনজীবন বিপর্যস্ত। এ সময় এখনও
নারীর নিরাপত্তা যে নিশ্চিত নয় তা স্পষ্ট। পুলিশ তাদের কাজ ঠিকভাবে করছে না বলেই এমন
একটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষ হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারছে।
মূলত পুলিশের ওপর মানুষের ক্ষোভ এখন চরমে। কয়েক মাস ধরেই মানুষ নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ
আসার পরও সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না। ফলে পুলিশের প্রতি দেশটিতে মানুষের আস্থা ক্রমেই নিম্নমুখী
হচ্ছে।