আমিরুল আবেদিন
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ২২:০৬ পিএম
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৪ ১৭:০৪ পিএম
ট্রাম্পকে আক্রমণকারী থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস
পেনসিলভানিয়ার বাটলারে গত শনিবার রিপাবলিকান র্যালিতে ট্রাম্পকে
লক্ষ্য করে গুলি করেন বিশ বয়স বয়স্ক থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। থমাস পেনসিলভানিয়ারই বেথেল
পার্কের বাসিন্দা। তিনি রিপাবলিকান দলের একজন নিবন্ধিত ভোটার। গত রবিবার এফবিআই তদন্তে
জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই ম্যাথিউ গুলি করেছিলেন। সিক্রেট
সার্ভিস সরাসরি কোনো বিবৃতি না দিলেও নিশ্চিত করেছে, হামলাকারী বন্দুকের গুলিতে নিহত
হয়েছেন। র্যালি অ্যাভিনিউ থেকে প্রায় ১৪০ মিটার দূরে অবস্থান নিয়েছিলেন ম্যাথিউ। এফবিআই
অবশ্য বিস্ময় প্রকাশ করেছে। কঠিন নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকার পরও ম্যাথিউ যে একাধিক গুলি
ছুড়তে পেরেছে তা সত্যিই বিস্ময়কর।
অঙ্গরাজ্যের পুলিশ জানিয়েছে, ম্যাথিউর ছোড়া গুলিতে একজন নিহত এবং
দুজন আহত হয়েছেন। সবাই পুরুষ বলে জানা গেছে। রবিবারের আগ পর্যন্ত নিহত ও আহতদের নাম
প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশের দেওয়া ভাষ্য অনুসারে, অন্তত পাঁচবার গুলির শব্দ পাওয়া গিয়েছে।
গতকাল এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট কেভিন রোজেক সংবাদ সম্মেলনে জানান, থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস
যে পাঁচবার গুলি ছুড়েছেন এটাই আমাদের অবাক করেছে। তবে ওপেন ফায়ার করার আগেই সিক্রেট
সার্ভিসের সদস্যরা তাকে গুলি করে। সিক্রেট সার্ভিসের একজন স্নাইপার সর্বপ্রথম তাকে
শনাক্ত করে গুলি করেন। গুলি করার সময় ম্যাথিউর পরনে প্রো গান ইউটিউব চ্যানেলের টি শার্ট
ছিল। ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনার তদন্ত এখনও চলমান। সিক্রেট সার্ভিস এবং হোমল্যান্ড
সিকিউরিটি বিভাগ এখনও এই হামলার মোটিভ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। কেভিন রোজেক এও
জানান, ‘ম্যাথিউর সঙ্গে কোনো পরিচয়পত্র ছিল না। তাই আমাদের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ওর
পরিচয়ের সন্ধান পেতে হয়েছে।’
ম্যাথিউর মরদেহ উদ্ধারের সময় তারা একটি এআর স্টাইলের সেমি অটোমেটিক
রাইফেল খুঁজে পেয়েছে। হামলার সময় ম্যাথিউ তার পরিচয়পত্র বহন করেননি। মরদেহ উদ্ধারের
পর ডিএনএ টেস্ট করার মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তবে তিনি কেন ট্রাম্পকে হত্যা
করতে চেয়েছেন তার উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। এজন্য তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
স্টেট ভোটার রেকর্ড অনুসারে ক্রুকস একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান ভোটার।
২০২১ সালে লিবারেল ক্যাম্পেইন গ্রুপকে তিনি ১৫ ডলার অনুদানও দিয়েছিলেন। অঙ্কের হিসাবে
কম হলেও তিনি রিপাবলিকের একজন সমর্থক ছিলেন। তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে ম্যাথিউ বন্দুক
কীভাবে সংগ্রহ করলেন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ খুঁজে পাওয়ার
চেষ্টাও করছেন তারা। এখন পর্যন্ত তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে তারা বিস্তারিত
কিছু জানাতে রাজি হননি। তবে এপি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা দুজন আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র অনুসারে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু
এই তদন্তের বিষয়ে সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারছে না। দ্য অ্যাসোসিয়েট প্রেসের অনুসন্ধানী
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাথিউর বন্দুকটি তার বাবা কিনে দিয়েছেন। ম্যাথিউর বাবা প্রায়
ছয় মাস আগে এআর স্টাইলের রাইফেলটি কেনেন। তবে ফেডারেল এজেন্টরা নিশ্চিত নন ঠিক কীভাবে
ম্যাথিউর বাবা এই বন্দুক কিনতে পেরেছেন।
হামলার পর থেকেই বেথেল পার্কে ম্যাথিউর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ।
সেখান থেকে অবশ্য বিস্তারিত কী পাওয়া গেছেÑ তা এখনই জানাতে রাজি হয়নি পুলিশ। ম্যাথিউর
কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। অতীতে কোনো বাজে ঘটনায় জড়িয়ে পড়ারও কিছু জানা যায়নি। তাই
কেন সে এমনটি করেছেÑ তা এখনও নিশ্চিত নয়। এই হামলার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
ক্রুকসের একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে। ছবিটিতে কালো গাউন পরা ম্যাথিউর হাস্যোজ্জ্বল ছবি
দেখা যাচ্ছে। বেথেল পার্ক হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষে ছবিটি তোলা হয় বলে জানিয়েছেন
তার বাবা। সিএনএন ম্যাথিউর বাবার একটি সাক্ষাৎকার নেন। তিনি বেশ বিপর্যস্ত অবস্থায়
রয়েছেন। তিনি জানান, ‘এসব কীভাবে হলো! আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না। এমন তো হওয়ার কোনো
কথাই না।’
বেশ কয়েকটি সংস্থা জানিয়েছে, ম্যাথিউ ফেসবুক বা কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেই। এমন বয়সের একটি ছেলের জন্য বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক। তবে ডিসকর্ড চ্যানেলে ক্রুকস অ্যাকটিভ ছিলেন এবং তদন্তকারীরা এখন তা খতিয়ে দেখছেন।
সূত্র : সিএনএন