প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ২২:০৫ পিএম
ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ফিলিস্তিনিরা পরিবারের কাছে ফিরে এলে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। দেইর আল বালাহ এলাকায় স্বজনকে জড়িয়ে একজন বন্দির কান্না (এএফপি)
বারোজনের বেশি ফিলিস্তিনি জিম্মিকে ১ জুলাই ইসরায়েল কারা
কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দেয়। দীর্ঘ সাত মাস পর জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন গাজার সবচেয়ে
বড় হাসপাতাল আল শিফার পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া। চিকিৎসার স্বার্থে তাদের অবরুদ্ধ গাজায় ফেরত পাঠানো হয়। ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আল-শিফা
হাসপাতালের প্রধানকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি গাজা উপত্যকার
একটি মেডিকেল সূত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দেইর আল-বালাহ শহরের আল-আকসা হাসপাতালের একটি সূত্র এএফপিকে
বলে, সালামিয়াসহ মুক্ত হওয়া অন্য ব্যক্তিরা খান ইউনিস শহরের পূর্ব দিক দিয়ে গাজায়
প্রবেশ করেছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে আল-আকসা হাসপাতালে ও অন্যদের খান ইউনিসের
অন্যান্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দেইর আল-বালাহতে থাকা এএফপির
একজন প্রতিনিধি দেখেছেন,
ছাড়া পেয়ে বন্দিরা পরিবারের কাছে ফিরে এলে এক আবেগঘন পরিবেশ
তৈরি হয়। তবে মুক্তি পেয়েই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন সালামিয়া। আলজাজিরাকে
দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের দিনরাত
অমানবিক নির্যাতন করা হয়। তার সাক্ষাৎকারের পরই ইসরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনিদের ওপর
অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। তবে এই সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের
অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ জানান, ‘পুরোটাই ভুয়ো কথা। এমন কোনো কিছুই ঘটেনি। বরং
সে মিথ্যাচার করছে। তাকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি বরং আমার মনে হয়েছে ভুল সিদ্ধান্ত। যারা
এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ফিলিস্তিনে
বিভিন্ন অভিযান পরিচালনাকালে নারী এমনকি মেয়ে শিশুদের ওপর বিভিন্ন ধরনের যৌন
নিপীড়ন চালানো হয়। যৌন নির্যাতনের পর তাদের পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়Ñ এমন অভিযোগও
রয়েছে। ইসরায়েলের কারাগারে পুরুষ বন্দিদের ওপরও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার জুনের মাঝামাঝি সময়ে এক
প্রতিবেদনে জানায়, ইসরায়েলের কারাগারে অন্তত দুজন বন্দির মলদ্বারে বিদ্যুৎতাড়িত
লোহার রড ঢুকিয়ে নির্যাতন করে মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষত ইসরায়েলের গোপন
কারাগার সদে তেইমানের কথা ফাঁস হওয়ার পর থেকেই এই অত্যাচারের খবর পাওয়া যাচ্ছিল।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের কিছু প্রমাণও
সম্প্রতি পাওয়া গেছে। গাজার আল-নাসের ও আল-শিফা হাসপাতালের পেছনে দুটো গণকবর থেকে
৫২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের গায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ভিন্ন একটি প্রতিবেদনে
জানিয়েছিল, বেশ কয়েকজন বন্দির সাক্ষাৎকার নিয়ে তারা জানতে পেরেছে নারী ও শিশু
বন্দিদেরও কারাগারে নির্যাতন করা হয়। অধিকাংশ সময় নারীদের লোহার খাঁচায় অভুক্ত
অবস্থায় বন্দি রাখা হয়। তারপর ক্ষুধার্ত রক্ষী কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয় তাদের দিকে। গত
এপ্রিলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কয়েক সদস্য বন্দিদের নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। নারী বন্দিদের রাইফেলের বাঁট, লোহার দণ্ড দিয়ে পিটিয়ে
অত্যাচারের অভিযোগও রয়েছে।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ইসরায়েল ‘সাবেহ’ বা গুপ্ত নির্যাতনের আশ্রয় নেয়। বন্দিদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। হাত-পা বেঁধে রাখার ফলে তাদের শরীরের জয়েন্ট আলাদা হয়ে যায়। জুনে এক মানবাধিকার সংস্থা জানায়, ইসরায়েলি অত্যাচারে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছে। গাজায় এখনও ইসরায়েলি অভিযান চলমান রয়েছে। সবার মনোযোগ রয়েছে বোমা হামলায়। কিন্তু চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে অভিযানরত অবস্থায় তাদের নির্যাতনের দিকে।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই